পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে একজন নাগরিক সরাসরি দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পান। অনেক তরুণ ও নবীন বিনিয়োগকারী বাজারে আসতে চান। তবে তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যে বিনিয়োগের জন্য চান একটি ডিজিটাল পুঁজিবাজার। এছাড়া সিঙ্গেল ডে স্যাটলমেন্টও চান অনেক বিনিয়োগকারী, চান প্রোডাক্টের বৈচিত্র। এসব ক্ষেত্রে দেশের বাজার এখনো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তাই অনেক তরুণ বাজারের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন না। তবে দেশের পুঁজিবাজারে সিঙ্গেল ডে ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থা চালু হলে ম্যানুপুলেশন বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য পুঁজিবাজার সহায়ক। তবে দেশের গুটিকয়েক মানুষ পুঁজিবাজার সম্পর্কে ধারণা রাখেন। দেশের এক শতাংশ মানুষও পুঁজিবাজার বোঝেন না বলেও বেশ কয়েকবার দাবি করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন অর্থসূচককে বলেন, আমরা চাই প্রতিটা কাজ খুব দ্রুত করার। পুঁজিবাজারে সেটেলমেন্টের সময় (টি+১, টি+২) অনেক পুরনো। তাই তরুণ বিনিয়োগকারীদের চাওয়ার সঙ্গে তালমিলিয়ে কমিশনও সেটেলমেন্টের সময় রিয়েল টাইম করতে চায়। এজন্য দরকার একটি সক্রিয় সিসিবিএল। এটি এখনো আমাদের নেই। তাই এসব সুবিধা আমরা এখনি দিতে পারছি না। তবে আমাদের পরিকল্পনা আছে।
তিনি আরও বলেন, তরুণ এই চাওয়ার সঙ্গে আমরা একমত। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে পুঁজিবাজারে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে রিয়েল টাইম চালু করার। ইতিমধ্যে বাজার ডিজিটালাইজেশনের জন্য বেশ কিছু কাজ করেছি। তবে এখন এগুলো সবার হাতে হাতে পৌছে দিতে কাজ করতে হবে। তরুণ বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নিরসনে সর্বদা কাজ করবে বিএসইসি। আর যে ঝুঁকি একেবারেই নিরসন করা সম্ভব না তা পুঁজিবাজারে কখনো চালু করা হবে না বলে জানিয়েছেন বিএসইসির এই কমিশনার।
তথ্য ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিনিয়োগসহ অন্যান্য আর্থিক সেবা প্রদানের ডিজিটাল ব্যবস্থাই হচ্ছে পুঁজিবাজারে ডিজিটাল সেবা। ডিজিটাল ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীরা ওয়েবসাইট, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন।
বেসরকারি খাতে চাকরি করেন শাখওয়াত রাব্বি। বেতনের নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তাই চাকরির পাশাপাশি সঞ্চয়ের সামান্য অর্থ দিয়ে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজছেন তিনি। রাব্বি অর্থসূচককে বলেন, বর্তমানে শেয়ার কেনার পর বিক্রি করার জন্য একাধিক দিন অপেক্ষা করতে হয়। কোনো কারণে শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে দেখার পরও কিছু করার থাকে না। শেয়ার বিক্রির উপযোগী হতে হতে দাম অনেক কমে যায়। এর পরিবর্তে একই দিনে কেনা-বেচার সুযোগ থাকলে ভাল হতো। তাহলে দাম কমে যাচ্ছে মনে হলে একই দিনে বিক্রি করে দেওয়া সম্ভব হতো। তাতে লোকসান কিছুটা কমিয়ে আনা যেত।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ অবশ্য সিঙ্গেল ডে ট্রেডিংয়ের বিষয়ে একমত নন। তাঁর মতে, এ ব্যবস্থায় অনেক বেশি ম্যানুপুলেশনের সুযোগ থাকে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীর ঝুঁকি বরং বেড়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, পরিবর্তনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া। তাই ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে।
ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে যেকোনো স্থানে বসেই সহজেই বিনিয়োগকারীরা নিজেরা তাদের পোর্টফোলিও পরিচালনা করতে পারেন। এ মাধ্যমে লেনদেনও সম্পন্ন হয় দ্রুত সময়ে এবং এটা একই সঙ্গে ব্যয়সাশ্রয়ী, পাশাপাশি নিশ্চিত হয় স্বচ্ছতা। তবে দেশের পুঁজিবাজার এখনো পুরোপুরি ডিজিটাল ব্যবস্থায় আসতে পারেনি। এর জন্য আরও কাজ করা দরকার বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আল আমিন অর্থসূচককে বলেন, বর্তমান তরুণদের চাওয়া পূরণ করতে হলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তালমিলিয়ে সবকিছুর সেটআপ করতে হবে। এর জন্য অনেক দামী সফটওয়ার ও যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। কারণ বর্তমান যেসব সফটওয়ারের মাধ্যমে কাজ করা হয় তা দিয়ে এখনকার বাজারের লোড নেওয়াই কষ্টসাধ্য। সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) আসলে সবকিছু আরও সহজ হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান কমিশন আসার পর বেশ কিছু কাজ করেছে। তারা এটিবি এবং এসএমই বোর্ড গঠন সহ বেশকিছু নতুন নতুন পণ্য এনেছে। বর্তমানে অনেক ফান্ড ব্লক অবস্থায় আছে। এগুলো বাজারে আসলে লেনদেনের গতি আরও বাড়বে। এছাড়া নির্বাচনের পর সরকার ও কমিশন পুঁজিবাজারে আরও কাজ করবে। পাশাপাশি নতুন নতুন যন্ত্রপাতি নিয়ে আসবে। তখন ধীরে ধীরে তরুণ বিনিয়োগকারি ও উদ্যোক্তাদের চাওয়া- পাওয়া পূরণ হবে।
রয়েল ক্যাপিটালের রিসার্চ প্রধান আকরামুল আলম অর্থসূচককে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার এবং ক্রিপ্টো মার্কেটে নানা ধরনের ডিজিটাল সুবিধা রয়েছে। সেসব বাজারের অতিরিক্ত সুবিধাগুলো যদি আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে প্রদান করা যায় তাহলে লেনদেন ও তারল্য অনেক বাড়বে। একই সময়ে চাহিদা অনুযায়ী বাজার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবে। ক্রিপ্টো মার্কেট বেশ জনপ্রিয়তা পাওয়ার মূল কারণ কিনেই সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করা যায়। তাই পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির সময় টি জিরোতে নামিয়ে আনলে লেনদেন বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। যতদ্রুত এসব অতিরিক্ত সুবিধাগুলো বিনিয়োগকারীদের দেওয়া যাবে তত উন্নতি হবে বাজারের। এর সঙ্গে প্রচার ও প্রসারের জন্য কাজ করতে হবে। কিভাবে সঞ্চয় করতে হবে ও কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে সেবিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনা বাড়ানো প্রয়োজন।’
একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ইলেকট্রনিক ট্রেডিংয়ের সূচনা হয়। এর আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে শেয়ার কেনাবেচা হতো। পরে ২০১৬ সালে ডিএসই ট্রেডিং অ্যাপ উন্মোচন করে।
অর্থসূচক/মো. সুলাইমান



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.