নীতি সুদহার বাড়লেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তারল্য ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করা বাড়িয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার নিলামে ৩৫টি ব্যাংক ও দুটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) রেপো ও তারল্য সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অর্থসূচককে বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত কিছুটা তারল্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে প্রতি কার্যদিবসে বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য সহায়তা দিচ্ছে।
মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বগতি, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা, নীতি সুদহার বৃদ্ধি এবং সরকারি ট্রেজারি বিলের ক্রমবর্ধমান সুদের হার বৃদ্ধির কারণে ব্যাংক খাতে কঠোর তারল্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জানা যায়, বেশিরভাগ ব্যাংক ইদানীং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে তারল্য সহায়তা নিচ্ছে। অপরদিকে সরকারি ট্রেজারি বিলের সুদের হার ১১ দশমিক ১৫ শতাংশে উঠেছে। এর ফলে অনেক ব্যাংক এখন সরকারি ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করছে।
মঙ্গলবারের নিলামে চারটি ব্যাংক একদিনের রেপো সুবিধার মাধ্যমে ৪১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা নিয়েছে। এছাড়া ১৬টি ব্যাংক ও দুটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) ৭ দিনের রেপো সুবিধার মাধ্যমে ৭ হাজার ৮৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা নিয়েছে।
একইদিনে ১৪টি ব্যাংক একদিনের তারল্য সহায়তা সুবিধার মাধ্যমে ৪ হাজার ২৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং দুটি ইসলামী ব্যাংক ১৪ দিনের তারল্য সুবিধার মাধ্যমে ৮৭০ কোটি টাকা নিয়েছে। এছাড়াও স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটির আওতায় একটি ব্যাংক নিয়েছে ৪৫ কোটি টাকা।
সুদের হার ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৭৫ থেকে ৮ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যষ্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেওয়া বন্ধ করেছে সরকার। সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিবর্তে এখন ভাঙানো হচ্ছে বেশি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। ফলে সরকারের খরচ চালানোর জন্য প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে ব্যাংক। এ জন্য ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা ধার করছে সরকার। এর ফলে ট্রেজারি বিলের সুদের হার ১১ দশমিক ১৫ শতাংশে উঠেছে।
এদিকে ট্রেজারি বিলের ওপর নির্ভর করে এখন ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারিত হয়। যে পদ্ধতিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, সেটাকে বলা হয় সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল (স্মার্ট)। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি জানুয়ারি মাসের জন্য স্মার্ট রেট হচ্ছে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে মাসে ছিল ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিতে পারে।
অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.