সংসদের টিকিট পেলেন যে ব্যবসায়ীরা

রাজনীতিতে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা। সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ব্যবসায়ী অঙ্গনে পরিচিত অনেকেই। এ ছাড়া স্বতন্ত্র পরিচয়ে অংশ নিয়েও নির্বাচিত হয়েছেন কয়েকজন। অনেক ব্যবসায়ী এবারই প্রথম সংসদে যাচ্ছেন, আবার অনেকে এর আগেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

যেসব ব্যবসায়ী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, সেপাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা টিপু মুনশি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আ হ ম মুস্তফা কামাল, রেনেসাঁ ও ইন্টারস্টফ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা, উদ্যোক্তা মো. শাহরিয়ার আলম, বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম, হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার একে আজাদ, এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী প্রমুখ।

দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান)

এক লাখ ৫০ হাজার ৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত এ ব্যবসায়ী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি।

রংপুর-৪ আসনে ৪৬ হাজার ৪৭২ ভোট পেয়ে আবারও জয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং সেপাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল পেয়েছেন ১৫ হাজার ৬৩১টি ভোট।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-১০ আসনে পঞ্চমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল

 

চার্টার্ড অ্যাকাউট্যান্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে জনশক্তি রফতানিসহ বিভিন্ন রফতানিমুখী শিল্প উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়েছেন হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদ। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক এ সভাপতি ফরিদপুর-৩ আসনে ঈগল প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

নোয়াখালী-২ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ৩ হাজার ৩২৩ ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম। রফতানিমুখী প্লাস্টিক, গার্মেন্টস, কেমিক্যাল ও ফুড প্রসেসিং শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে তার।

রাজশাহী-৬ আসনে ১ লাখ ১ হাজার ৮২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রেনেসাঁ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার আলম

এছাড়াও এই তালিকায় রয়েছেন ফেবিয়ান গ্রুপের মালিক তাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী গোলাম দস্তগীর গাজী , বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান,  ওয়েল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) একাধিক বারের সভাপতি বেনজীর আহমেদ, গ্লোবের পরিচালক মামুনুর রশিদ কিরণ, নিপা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খসরু চৌধুরী, শাশা ডেনিমসের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মণ্ডল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মমিন মণ্ডল, আর এ কে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান, আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং বিডি থাই এলুমিনিয়াম ও বিডি থাই ফুডসের কর্ণধার জাহিদ মালেক।

কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ফেবিয়ান গ্রুপ তার মালিকানাধীন।

 

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। প্লাস্টিক ও গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে তার।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সভাপতি কে এম সেলিম ওসমান।

চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন শিল্পগোষ্ঠী ওয়েল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। মোট ৭৮ হাজার ২৬৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

ধামরাই উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-২০ আসনে আওয়ামী লীগের টিকেট নিয়ে জয় পেয়েছেন জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) একাধিক বারের সভাপতি বেনজীর আহমেদ।

নোয়াখালী-৩ আসনে নৌকার টিকেটে হাট্রটিক জয় পেয়েছেন মামুনুর রশিদ কিরণ।ফার্মাসিউটিক্যাল, কোমল পানীয়, বিস্কুট ও কৃষি খাতের প্রতিষ্ঠান গ্লোবের পরিচালক তিনি।

ঢাকা-১৮ আসনে কেটলি প্রতীক নিয়ে ৬৯ হাজার ৮৩১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ খসরু চৌধুরী। নিপা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর পরিচালক তিনি।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবার চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে নির্বাচন করেছিলেন আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৪৩ হাজার ৫৭৭ ভোট। তিনি শাশা ডেনিমসের চেয়ারম্যান।

আবদুল মমিন মণ্ডল সিরাজগঞ্জ-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছেন। তিনি রফতানিমুখী তৈরি পোশাক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মণ্ডল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মমিন মণ্ডল করোনায় আক্রান্ত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে জয়ী হয়েছেন কলার ছড়া প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। একরামুজ্জামান আর এ কে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে টানা চতুর্থ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির তিনবারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

মানিকগঞ্জ-৩ আসনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ২৬ হাজার ৭২০ ভোটে জয়ী হয়েছেন। তিনি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিডি থাই এলুমিনিয়াম এবং বিডি থাই ফুডসের কর্ণধার।

 

 

 

অর্থসূচক/এমআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.