সঞ্চয় ভেঙে পেট ভরানোর চেষ্টা সাধারণ মানুষের

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে জীবনযাত্রার মান ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে সীমিত আয়ের মানুষেরা। তাই খরচ বাড়লে সঞ্চয় ভেঙ্গে পেট চালাতে হচ্ছে মানুষের।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে ৯ শতাংশের উপরে মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে জাতীয় মজুরির হার এখন কম। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে মানুষের নিট বিনিয়োগও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সংসারের খরচ সামলান অনেকেই।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ইতিবাচক থাকলেও পরের তিন মাস ঋণাত্মক দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ শেষ তিন মাসে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বেড়েছে। এর ফলে গত তিন মাস নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) ঋণাত্মক ধারায় রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ নভেম্বর মাসে নিট বিনিয়োগ (বিক্রি) ঋণাত্মক হয়েছে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। আগের মাসেও নিট বিক্রি ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণাত্মক ছিল। আর সেপ্টেম্বর মাসে ঋণাত্মক ছিল ১৪৭ কোটি টাকা। যদিও অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ভাঙানোর প্রবণতা কম থাকায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ বেশ বেড়েছিল। ওই দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) নিট বিক্রি ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা ইতিবাচক ছিল।

সবমিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়েও নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় ছিল, তবে ওই সময় এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট বিক্রি ঋণাত্মক বেড়েছে ১৪০ শতাংশ। নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে খাদ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ২০১১ সালের অক্টোবরে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ।

খুলনার বাসিন্দা আরিফুজ্জামান বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। স্বল্প বেতনের নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে ছোট সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে তার। তিনি অর্থসূচককে বলেন, বেতনের সামান্য টাকা দিয়ে সংসার আর চলছে না। মেয়াদ পূর্তির আগেই গত অক্টোবর মাসে দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমার একটি মাত্র ছেলে। তার স্কুলের খরচ ও সংসারের নানাবিধ খরচ চালানোর জন্য এক পর্যায়ে সঞ্চয়ের অর্থ খরচ করতে হয়েছে। আসলে বন্ধুদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে আড্ডা দিতে বসি। এসব আড্ডার বিষয়বস্তু হচ্ছে কে কত টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙে কত টাকার লোকসান গুনেছেন। অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভেঙে জমানো টাকা খরচ করছেন।

এদিকে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে বিক্রি কমতে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয় ৩২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দাঁড়ায় ঋণাত্মক প্রায় ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রি হয় ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। একই সময়ে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৮৪ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মানে পুরো অর্থবছরে এই খাত থেকে সরকার এক টাকারও ঋণ পায়নি। মূলত গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে বেশি ভাঙানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে।

এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পেয়েছিল সরকার। পুরো অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অথচ কভিডের পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এটি তার আগের অর্থবছরে ছিল মাত্র ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।

অর্থসূচক/মো.সুলাইমান/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.