আদানির কোম্পানির শেয়ারের দাম ‘আকাশে ছুঁটছে’

ভারতের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম আকাশ ছুঁতে শুরু করেছে। এর ফলে আদানির মোট সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৯ হাজার ৭৬০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এতে আবারও ভারত ও এশিয়ার শীর্ষ ধনীর আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন তিনি।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর আদানি এনার্জি সলিউশনের শেয়ারের দাম ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ ও আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারের দাম ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ ও আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারের দাম ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আদানি পাওয়ারের শেয়ারের দাম ৫ শতাংশ, আদানি উইলমারের শেয়ারের দাম ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ, আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ, আদানি পোর্টসের শেয়ারের দাম ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং আদানি সিমেন্টের শেয়ারের দাম শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়েছে।

হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছিল, নিজেদের শেয়ার ঘুরপথে কিনে দাম বাড়াত আদানি গোষ্ঠী, যেটাকে সহজ কথায় শেয়ার জালিয়াতি বলে। তবে গৌতম আদানি ওই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছিলেন। তাতে অবশ্য কিছু হয়নি। তাঁদের জালিয়াতি নিয়ে জোরেশোরে তদন্ত শুরু হয়। সেই তদন্ত চলাকালে ওসিসিআরপির আরেক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, আদানি পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকজন বছরের পর বছর গোপনে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কিনেছেন। ঠিক সেই সময় উল্কার গতিতে আদানি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চও একই অভিযোগ তুলেছিল, যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল আদানি গোষ্ঠী। সেই প্রতিবেদনের জেরে অবশ্য গ্রুপটির বাজার মূলধন ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি কমে যায়। ব্যক্তিগত সম্পদও হারান গৌতম আদানি। গত বছরের ২৭ জানুয়ারি আদানির সম্পদের মূল্য ২০ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৮০ কোটি ডলার কমে যায়, যা এক দিনে ‍সর্বোচ্চ সম্পদ হারানোর রেকর্ড।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গের ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদানি গোষ্ঠী ৪১৩ পৃষ্ঠার এক জবাব তৈরি করে হিনডেনবার্গের কাছে পাঠায়। তাতে বলা হয়েছে, ভারতের আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে হিনডেনবার্গের স্পষ্ট ধারণা নেই। বাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ কীভাবে করা হয়, সে বিষয়েও তাদের ধারণা কম। সে জন্য তারা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছে।

গত দুই দিনে গৌতম আদানির সম্পদের মূল্য বেড়েছে ১৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। ফলে তিনি স্বদেশি মুকেশ আম্বানিকে টপকে এশিয়ার শীর্ষ ধনীর আসন পুনরুদ্ধার করেছেন। বর্তমানে মুকেশ আম্বানির সম্পদের মূল্য ৯৭ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।

ভারতের বিরোধী দলগুলো আদানি গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারি নিয়ে আন্দোলন শুরু করলে গত বছরের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন। ১০ মে তারা সুপ্রিম কোর্টে এ ব্যাপারে রিপোর্ট পেশ করে। সেই রিপোর্টে বলা হয়, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে সেবির কোনো ভুল ছিল তা বলা যাবে না। সেবিকে এরপর তাঁদের আরজি মেনেই তদন্ত শেষ করার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও সেবি প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। তারা আদানি-হিনডেনবার্গ সংক্রান্ত ২৪টি মামলায় তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে আরও ১৫ দিন সময় চায়। পরে সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ২৫ আগস্ট তারা আদানিসংক্রান্ত ২২টি মামলার রিপোর্ট জমা দেয়। বাকি দুটি মামলার জন্য আরও সময় চায় সুপ্রিম কোর্টের কাছে।

গত বুধবার সেই মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, আদানি-হিনডেনবার্গ মামলায় বেঞ্চ গঠন করা হবে না; অর্থাৎ সেবির তদন্তে আস্থা রাখছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের ভাষ্য, নিয়ন্ত্রক সংস্থার আওতায় যেখানে তদন্ত চলছে, সেখানে শীর্ষ আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সেবি যেভাবে তদন্ত করছিল, সেভাবেই এ-সংক্রান্ত অন্য দুটি মামলারও তদন্ত করে যাবে। এই রায়ের পর আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বিষয়টি যে কতটা স্বস্তির, তার নজির স্থাপন করেছেন স্বয়ং গৌতম আদানি। রায়ের পর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে মতামত দিয়েছেন গৌতম আদানি।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.