ঋণ নিতে সরকারের নজর এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকে

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে সরকারের ঋণে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। আগের অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেকর্ড ঋণ নিয়েছে সরকার। তবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ২৭ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ২৭ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া ঋণের ৩৫ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এর ফলে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস শেষে সরকারের নিট ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৭ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, নতুন ঋণের চেয়ে পুরোনো ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল বেশি।

এদিকে আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার পরিবর্ত ১৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছিলো। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছিলো ৪৫ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। সেই সময়ে সরকারের নিট ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিলো ২৬ হাজার ৯৭ কোটি টাকা।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেওয়ায় অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকও সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলো।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া মঙ্গলজনক। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া মানেই টাকা ছাপানো। আর বাজারে নতুন টাকা ঢুকলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যায়। তাই সরকারকে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেই ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।

আগের অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আলোচ্য সময়ে সরকারের ব্যাংকঋণের নিট পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে সরকারের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ছে। এই ঘাটতি মেটানো হয় দুটি উৎস থেকে। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাত। বৈদেশিক খাত থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা পাওয়া না গেলে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয় সরকারকে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র খাত।

সাধারণত সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের প্রয়োজনীয় ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেইসঙ্গে ব্যাংকঋণের সুদের হারও বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। এতে বেসরকারি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়। তাই বরাবরই ব্যাংকব্যবস্থা থেকে যতটা সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থসূচক/মো. সুলাইমান/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.