বন্দুকধারীদের গুলিতে ৪ মুসলিম যুবক নিহত, কারফিউ জারি

মণিপুরে ফের সহিংসতা

ভারতে বিজেপিশাসিত মণিপুরে ফের সহিংসতা হয়েছে। গত বছর ৩ মে থেকে রাজ্যটিতে সহিংসতা চলছে। কিছুদিন শান্ত থাকার পরে ফের সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল (সোমবার) বিকেলে থৌবাল জেলার লিলং এলাকায় অজ্ঞাত বন্দুকধারী দুর্বৃত্তরা ৪ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। নিহতরা সকলেই মুসলিম বলে জানা গেছে। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন ১১ জন।

এদিকে, গতকালের সহিংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন হামলাকারীদের চারটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলাকারীরা চাঁদাবাজির জন্য লিলং চিংজাও এলাকায় এসেছিল, তারপরে বিবাদ শুরু হয়। স্থানীয় লোকজন হামলাকারীদের ধাওয়া করলেও তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলি চালায়।

অভিযুক্তদের এখনও পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ দৌলত (৩০), এম সিরাজউদ্দিন (৫০), মুহাম্মদ আজাদ খান (৪০) ও মুহাম্মদ হুসেন (২২)। বলা হয় সকলেই পাঙ্গাল (মুসলিম)। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিহতরা পাঙ্গাল (মুসলিম) বলে জানা গেছে।

স্থানীয় লোকজন জানায়, হামলাকারীরা পুলিশের পোশাক পরে এসেছিল। তারা অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। চারটি গাড়িতে করে আসা ওই হামলাকারীরা কিছু কটা কাটাকাটির পর নির্বিচারে গুলি চালায়। গুলিতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজন মারা যায়।

প্রশাসনের দাবি, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। যদিও ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, থৌবাল, কাকচিং এবং বিষ্ণুপুর জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং একটি ভিডিও বার্তায় সহিংসতার নিন্দা করেছেন এবং জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ হামলার পেছনে যারা আছে তাদের ধরার চেষ্টা করছে। শিগগিরি তাদের গ্রেফতার করে আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে।’ তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শাসক দলের সব মন্ত্রী ও বিধায়কের জরুরি বৈঠকও ডেকেছেন।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে মণিপুর শিরোনামে ছিল। গত বছরের ৩ মে থেকে এখানে সহিংসতা চলছে। বিজেপিশাসিত মণিপুরে ‘মেইতেই’ সম্প্রদায়কে ‘তপসিলি উপজাতি’ মর্যাদা দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হলে, এর বিরোধিতায় ‘কুকি’ ও অন্যান্য উপজাতি সংগঠন যৌথভাবে মাঠে নামায় গত প্রায় ৯ মাস ধরে সহিংসতা চলছে। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০০ মানুষ নিহত এবং ১১০০ মানুষ আহত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশি রাজ্যগুলোতেও আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ।

মণিপুর হাইকোর্ট ‘মেইতেই’দের তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই উপজাতি বিভিন্ন সংগঠন তার বিরোধিতায় মাঠে নামে। সেই ঘটনা থেকেই মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী ‘মেইতেই’ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জোসহ কয়েকটি তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘাতের সূচনা হয়েছিল। ৩৮ লাখ জনসংখ্যা সম্বলিত মণিপুরে ৫৩ শতাংশ মেইতেইদের অধিকাংশের বাস ইম্ফল উপত্যকায়। অন্যদিকে, ৪০ শতাংশ নাগা-কুকিদের বেশিরভাগ থাকেন পাহাড়ি জেলায়।

পূর্বাঞ্চলীয় আর্মি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল রানা প্রতাপ কলিতা গত ১৬ ডিসেম্বর বলেছিলেন, মণিপুরে সহিংসতার সবচেয়ে বড় কারণ কুকি-মেইতেইয়ের কাছে বিপুল সংখ্যক অস্ত্রের উপস্থিতি এবং প্রতিবেশী মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং অসম রাইফেলস, রাজ্য পুলিশ এবং সিএপিএফ যৌথভাবে মণিপুর সহিংসতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করেছে বলেও সেনা কর্মকর্তা জেনারেল কলিতা মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু এর পরেও সেখানে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। পার্সটুডে

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.