বলপ্রয়োগ করে ফিলিস্তিনিদের হাতে আটক ইসরাইলি বন্দিদের মুক্ত করার অবস্থান থেকে পিছু হটেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, বন্দিদের মুক্ত করার ব্যাপারে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি তার স্ত্রী সারা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য পোপ ফ্রান্সিসকে এগিয়ে আসার বিনীত অনুরোধ করেছেন।
সোমবার পার্লামেন্টে বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সমস্ত পণবন্দিকে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে এর সাফল্যের জন্য ‘সামরিক চাপ’ প্রয়োজন বলে আবারো দাবি করেন তিনি। নেসেটের ওই বিশেষ অধিবেশনে গাজায় আটক ইসরাইলি বন্দিদের পরিবারের লোকজনকে দর্শক হিসেবে উপস্থিত থাকার সুযোগ দেয়া হয়। তাদের উপস্থিতিতে নেতানিয়াহু বলেন, আমরা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারব না; তবে বন্দিদের মুক্ত করার জন্য আরো সময় প্রয়োজন।
এ সময় দর্শক গ্যালারি থেকে বন্দিদের একজন স্বজন চিৎকার করে বলে ওঠেন, “আমরা আর সময় দিতে পারব না।” তার বক্তব্য সমর্থন করে বাকি স্বজনরা তখন দাঁড়িয়ে বলে ওঠেন, “এখন! এখন! এই মুহূর্তে!” তারা বলেন, এই মুহূর্তে বন্দিদের মুক্ত করে আনতে হবে।
এ সময় চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যান ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বন্দিদের মুক্ত করার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার জন্য তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে শক্ত করে ধরেছেন। এমনকি তার স্ত্রী সারা গাজা থেকে ইসরাইলি বন্দিদের মুক্ত করে আনতে সাহায্য করার জন্য পোপ ফ্রান্সিসকে সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছেন।
ইসরাইলের অভ্যন্তরে পদত্যাগের জন্য প্রচণ্ড চাপের মুখে থাকা নেতানিয়াহু বলেন, সেনা অভিযান না চালালে এখনো পর্যন্ত ১০০ জন পণবন্দিকে মুক্ত করা সম্ভব হতো না। বাকি সকলকেও এভাবে ছাড়িয়ে আনতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার বক্তব্য, গাজায় ইসরায়েলের ফিল্ড কম্যান্ডার তাকে জানিয়েছেন, সকলকে মুক্ত করতে আরো বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। ফলে সকলকে ধৈর্য ধরে থাকতে হবে।
নেতানিয়াহুর দলের নেতারা জানিয়েছেন, পার্টির কাছে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, লড়াই জারি থাকবে। আপাতত এই লড়াই বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং আগামী দিনে লড়াইয়ের তীব্রতা আরো বাড়বে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলার কারণে গাজার শিফা হাসপাতালের পরিস্থিতি ভয়াবহ। ডাব্লিউএইচও-র আপৎকালীন বিভাগের টিম কোঅর্ডিনেটর গাজা থেকে ফিরে ডিডাব্লিউয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মেঝেতে পড়ে রয়েছে শত শত রোগী। কোনো কোনো রোগীকে স্ট্রেচারে করে, ট্রলিতে করে নিয়ে যাচ্ছেন আত্মীয়রা। গোটা হাসপাতালে চার-পাঁচজন চিকিৎসক কাজ করছেন। নার্সের সংখ্যাও তেমনই। কিছু স্বেচ্ছাসেবক, কিছু আত্মীয় সাহায্য করার চেষ্টা করছেন। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি হাসপাতালের ভিতর।
ডিডাব্লিউ-কে তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতাল চত্বরে হাজার পঞ্চাশেক মানুষ আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কারণ তাদের ধারণা, হাসপাতল চত্বরে ইসরাইলের হামলার মুখে পড়তে হবে না তাদের। সূত্র: পার্সটুডে, ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এপি, এএফপি
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.