ব্যাংকিং খাত থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে: সিপিডি

২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪টি বড় ধরনের ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ হয়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংকলন করে আর্থিক খাত থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে।

শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির নিজস্ব কার্যালয়ে চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ জানাতে প্রতিষ্ঠানটির সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের বড় ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকার বেশি পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে। তার মতে, দেশের ব্যাংকিং খাত মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের হাতে পড়েছে। তারা আধিপত্য বিস্তারে ব্যাংকগুলোকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

সিপিডি বলছে, খেলাপি ঋণ (এনপিএল) এখনো অনিয়ন্ত্রিত। এটি আর্থিক খাতের জন্য হুমকি। সুশাসন ও সংস্কারের অভাবে দেশের ব্যাংকিং খাত ধারাবাহিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। খেলাপি ঋণের উচ্চহার ও অর্থনৈতিক সূচকগুলো নিম্নমুখী হওয়ায় এর দুর্বলতাগুলো প্রকাশ পেয়েছে। এগুলো সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। দুঃখজনকভাবে ব্যাংকিং খাতকে রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকার পূরণ হচ্ছে না,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো যথেষ্ট নয়।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১১-২০১২ অর্থবছর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক লাখ ৫৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা হয়েছে। তবে বিশেষভাবে উল্লেখ করা ঋণ, শ্রেণিকরণে আদালতের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ঋণ ও পুনঃতফসিল করা ঋণ যোগ করা হলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে বলেও জানিয়েছে সিপিডি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, এমনকি নির্বাচনের পরেও না। নীতি নির্ধারকদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিম্ন-আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা খেয়ে ফেলছে। বাজার কারসাজি এবং সিন্ডিকেট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। অর্থনীতি এখন বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এবং সত্যিকার অর্থে একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একমাত্র আশা, নীতি নির্ধারকরা এটি বুঝবেন এবং স্বীকার করবেন যে, গতানুগতিক পন্থায় কাজ হবে না। কেবল নি:স্বার্থ শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংস্কারের কঠিন পথে যেতে পারে এবং অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে পারে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায় থেকে পদক্ষেপ দরকার। উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি বন্ধে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন, যাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে পারেন। শ্রম ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর বিধিনিষেধের শঙ্কা দূর করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.