ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে সুপারিশ করেছিলো। তাই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিএসইসির সুপারিশে বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির বর্তমান পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠনের আদেশ জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা যায়, সাত সদস্যে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যেখানে বাদ পড়েছেন রন ও রিক হক শিকদার। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও জনস্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, নতুন করে যে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে- সেখানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন সৈয়দ ফরাদ আনোয়ার। যিনি এখন বর্তমানে মেঘনা ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া পরিচালক হিসেবে থাকছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ কামাল হোসেন, খলিলুর রহমান, পারভিন হক সিকদার, শফিকুর রহমান এবং মোয়াজ্জেম হোসেন। নতুন পরিচালনা পর্ষদে স্থান পেয়েছেন আগের পরিচালনা পরিষদের তিনজন পরিচালক। বাকি পরিচালকদের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক

 

তিনি আরও বলেন, আগের পর্ষদে মোট পরিচালক সংখ্যা ছিল আটজন। ‌ তাদের মধ্যে থেকে নতুন পর্ষদে জায়গা পেয়েছেন তিনজন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ন্যাশনাল ব্যাংকসহ ১৪ ব্যাংক রেকর্ড পরিমাণ মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এটি মূলত ব্যাংকগুলোয় অনিয়মের কারণে সংকটময় আর্থিক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া তৃতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ছিল ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরের এই হিসাবটি ছিল সর্বোচ্চ ঘাটতি। এর আগে ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে সর্বোচ্চ ঘাটতি রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক কাঠামো বাসেল থ্রি অনুসারে, ব্যাংকগুলোর জন্য ন্যূনতম মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (সিএআর) ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ রাখতে হয় নিরাপত্তা হিসেবে। ১৪টি ব্যাংক ন্যূনতম সিএআর বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতের সিএআর ছিল ১১ দশমিক শূন্য আট শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২২-এ বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংকগুলো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন সিএআর নিয়ে চলেছে। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে এই ১৪ ব্যাংকের অধিকাংশেরই মূলধন ঘাটতি বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে জানা যায়, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে দুই হাজার ২৪ কোটি টাকা ও ৬০৭ কোটি টাকা।

ব্যাংক কর্মকর্তারা মনে করছেন, ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম প্রধান কারণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।

মূলধন ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকগুলো হলো- অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.