ঋণের ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি হলে বীমা-ব্যবসা করতে পারবে না ব্যাংক

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ হলে তারা ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ বা বীমা ব্যবসায় অযোগ্য হবে। একই সঙ্গে মূলধন সংকট, ক্রেডিট রেটিং গ্রেড ২ এর কম থাকা এবং টানা তিন বছর মুনাফা করতে পরছে না এমন ব্যাংক বীমা কোম্পানির এজেন্ট হতে বা ব্যবসা করতে পারবে না।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রকাশ করেছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তন করা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৭(১)(ল) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনক্রমে সকল তফসিলি ব্যাংক বীমা কোম্পানির ‘কর্পোরেট এজেন্ট’ হিসেবে বীমা পণ্য বিপণন ও বিক্রয় ব্যবসা ১২ ডিসেম্বর থেকে করতে পারবে।

“ব্যাংকাসুরেন্স” অর্থ ব্যাংক এবং বীমা কোম্পানির মধ্যে একটি অংশীদারিত্ব ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ব্যাংক তার গ্রাহকদের নিকট বীমাপণ্য বিপণন ও বিক্রয় করতে পারবে। তবে এজন্য অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে কর্পোরেট এজেন্ট লাইসেন্স নিতে হবে।

ব্যাংকাসুরেন্স ব্যবসা করতে হলে ব্যাংকের অবশ্যই ঝুঁকিবারিত সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত বা ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেট রেশিও (সিআরএআর) সাড়ে ১২ শতাংশ থাকতে হবে। ব্যাসেল৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ক্রেডিট রেটিং গ্রেড ২ এর কম হলে বীমা ব্যবসা করতে পারবে না। মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি হলে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ ব্যবসায় অযোগ্য হবে। আর কোন ব্যাংকে বিমা ব্যবসারা জন্য আগ্রহী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দক্ষ ও উপযুক্ত জনবলের প্রত্যায়ন থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ৩৪টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমান ৫ শতাংশের বেশি। এসব ব্যাংক বিমার কর্পোরেট গ্রাহক হতে বাদ পড়বে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি এবং বিশেষায়িত ২টি ব্যাংকের খেলাপির কারণে গ্রাহক হতে পারবে না। অপরিদেক ২৭টি ব্যাংকের খেলাপি ৫ শতাংশের কম হওয়ায় গ্রাহক হতে পারবে।

তবে শর্ত অনুযায়ী, শরিয়াহ ভিত্তিক মোট ১০ ব্যাংকের মধ্যে ৭টি এবং বিদেশি ৯টি ব্যাংকের মধ্যে ৭টি ব্যাংকসুরেন্স হওয়ার যোগ্য হিসাবে বিবেচিত। এছাড়া ধারাবিহকভাবে তিন বছরের মুনাফা করেছে এমন ব্যাংকের সংখ্যাও কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি সংশোধন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। চুক্তির মেয়াদ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক চুক্তি নবায়ন বা মেয়াদ বাড়ানো হালনাগাদ তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। বিমার পলিসি হোল্ডারের পরিষেবা পেতে ধারাবাহিক সহযোগিতা করবে বীমা কোম্পানিগুলো। বীমার গ্রাহক বীমার মেয়াদপূর্তিতে প্রাপ্য অর্থ যেন গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারে সে বিষয়টি ব্যাংকেই নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের অনুকূলে বীমা পলিসি নবায়নের কমিশন চলমান থাকবে।

এতে বলা হয়েছে, প্রতি ৩ বছর পরপর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি পর্যালোচনা করতে হবে। বিদ্যমান চুক্তির নবায়ন বা সংশোধন করা হলে ব্যাংকসমূহ তা লিখিতভাবে নবায়ন বা সংশোধনের ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। ব্যাংক কোনবাবেই বীমা গ্রাহককে অষ্পষ্ট তথ্য দিতে পারবে না। ব্যাংকাসুরেন্স ম্যানেজার বা দায়িত্বরত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি ব্যাংকের গ্রাহকের নিকট বীমাপণ্য বিক্রয় করতে পারবে না। ব্যাংক বীমাকারীর বীমা সংক্রান্ত কোন ঝুঁকি গ্রহণ করবে না এবং বীমাকারী হিসেবে কাজ করবে তার ষ্পষ্টভাবে ঘোষণা দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, প্রধান বিমা কর্মকর্তাকে কমপক্ষে স্নাতকোত্তর পাশ হতে হবে। ব্যাংক অথবা বীমা প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আর ব্যাংকাসুরেন্স ম্যানেজারকে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী হতে হবে। বিমার জন্য শাখা নেটওয়ার্ক, বিক্রয় নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল মাধ্যম বাধ্যকামূলকভাবে থাকতে হবে। এ ছাড়া বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কর্তৃক নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী বীমাকারী এবং ব্যাংকের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী কমিশন নির্ধারণ করবে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.