জয়ে দিয়ে নিউজিল্যান্ড সফর শুরু বাংলাদেশের

এনামুল হক বিজয় ও তানজিদ হাসান তামিমের ব্যাটে দারুণ শুরুই পেয়েছিল বাংলাদেশ। বিজয়ের বিদায়ে ভাঙে তাদের দুজনের ৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটি। এরপর তিনে নামা সৌম্যকে সঙ্গে নিয়ে তানজিদ গড়েন ১০১ রানের জুটি। তানজিদ ফেরেন ৫৮ রানে এবং পরবর্তীতে হাফ সেঞ্চুরি করা সৌম্য আউট হয়েছেন ৫৯ রানের ইনিংস খেলে। তাওহীদ হৃদয় ও আফিফ হোসেন ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে সফরকারীদের টেনে তুলেছেন লিটন দাস ও রিশাদ হোসেন। লিটন হাফ সেঞ্চুরির পর ফিরলেও শেষ পর্যন্ত দলকে টেনেছেন রিশাদ। খেলেছেন ৫৩ বলে ৮৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। রিশাদের সেঞ্চুরি মিসের দিনে ৩৩৪ রানের বড় পুঁজি পায় বাংলাদেশ। তারপর রিশাদের পাশাপাশি হাসান মাহমুদ-আফিফ হোসেনদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে কিউইদের ৩০৮ রানে আটকে রাখে বাংলাদেশ। ম্যাচটি জিতে নেয় ২৬ রানে। ফলে দারুণ এক জয়ে নিউজিল্যান্ড সফর শুরু করল বাংলাদেশ।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আগ্রাসী সূচনা করে নিউজিল্যান্ড একাদশ। মাত্র চার ওভারের মধ্যে রান-বলের সামঞ্জস্য বজায় রেখে ২৬ রান তুলে ফেলে তারা। চতুর্থ ওভারের শেষ বলে অবশ্য উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। নিজের দ্বিতীয় ওভারে জ্যাকব কামিংকে ফেরান হাসান মাহমুদ। হাসানের বলে মিস টাইমিং করে উইকেটরক্ষক লিটনের তালুবন্দি হন কামিং। ফেরার আগে করেন ১৮ বলে ২২ রান। নিজের পরের ওভারে আবারও উইকেটের দেখা পান হাসান।

আরেক ওপেনার জ্যাকব ভুলাকে আফিফ হোসেনের ক্যাচ বানিয়ে মাঠছাড়া করেন তিনি। শট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ভুলা। কিউই এই ওপেনার করেন ১২ বলে ৮ রান। ৩২ রান তুলতেই উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড একাদশ ইনিংসের ১৪তম ওভারে নিজেদের তৃতীয় উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড একাদশ। তানজিম হাসান সাকিবের গুড লেংথের ডেলিভারি কুইন সুন্দির ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক লিটনের মুঠোবন্দী হয়। ৩২ বলে ২৩ রান করে ফেরেন সুন্দি। অধিনায়ক ভারত পোপলির সঙ্গে তার জুটি ছিল ৩৯ রানের।

সুন্দি ফেরার পর চটজলদি ফিরে যান জামাল টড। আফিফ হোসেনকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন এই ব্যাটার। ৮০ রানের মধ্যে চার উইকেট হারায় কিউইরা। দলীয় ৮০ রানে চার উইকেট হারানোর পর ঘুরে দাঁড়ায় কিউইরা। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ভারত পোপলি। সন্দীপ প্যাটেলও তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। দুজনের জুটি শতরান ছাড়ায়। দেখেশুনে খেলতে খেলতে সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে যান পোপলি। যদিও তাকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেন আফিফ। ৯০ বলে ৯২ রান করা পোপলিকে বোল্ড করেন আফিফ। এই ইনিংসে ছিল ১৩টি চারের মার। পোপলি-সন্দীপের জুটিতে ১৫৬ রান পেয়েছে নিউজিল্যান্ড একাদশ।

দলীয় ৪২ ওভারে সন্দীপকেও প্যাভিলিয়নে ফেরায় কিউইরা। তাকেও ফেরান আফিফ। সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দেয়ার আগে ৭৭ বলে ১১টি চার ও দুটি ছক্কায় ৮৯ রান করেন এই ব্যাটার। এর আগের ওভারে বেন পোমারকে ফেরান রাকিবুল হাসান। শেষদিকে রিশাদ-সাকিবরা সহ চেপে ধরলে আর সুবিধা করতে পারেনি কিউইরা। শেষদিকে ২৬ বলে অপরাজিত ৩৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন জই ফিল্ড। শুধুমাত্র পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পেরেছে তা। বাংলাদেশের হয়ে তিনটি উইকেট নেন রিশাদ। দুটি করে উইকেট নেন হাসান এবং আফিফ।

এ দিন শুরুতে উইকেটে হালকা ঘাস থাকায় শুরু থেকেই সুইং পাচ্ছিলেন নিউজিল্যান্ড একাদশের দুই পেসার জো ফিল্ড এবং জেমস হার্টসর্ন। কয়েকটি ডেলিভারিতে পরাস্ত হলেও আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে ঠিকই রান তুলছিলেন এনামুল হক বিজয়। দারুণ সব শট খেলে চারটি চার ও একটি ছক্কাও মেরেছেন ডানহাতি এই ওপেনার। দুর্দান্ত শুরু করলেও হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি বিজয়ের। ফিল্ডের অফ স্টাম্পে পড়ে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে ড্রাইভ করেছিলেন তিনি। তবে বলের লাইন মিস করায় ২৬ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে ফিরতে হয় তাকে।

বিজয় ফেরার পর দ্রুত রান তুলতে থাকেন তানজিদ। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছেন তিনে নামা সৌম্য। দুজনে মিলে গড়েন পঞ্চাশ রানের জুটি। নিউজিল্যান্ড একাদশের দুই পেসারের বিপক্ষে শুরুতে খানিকটা ভুগছিলেন তানজিদ। তবে সময় যত গড়িয়েছে ব্যাটিংয়ে ততই ছন্দ খুঁজে পেয়েছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। বিজয় ফেরার পর ব্যাট হাতে আক্রমণাত্বক হতে থাকেন। কিউই বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে দ্রুতই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তানজিদ। সামর্থ্য সিংয়ে লেংথ ডেলিভারিতে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে ৪০ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন তরুণ এই ওপেনার।

বিজয় ফেরার পর দারুণ ব্যাটিংয়ে জুটির সেঞ্চুরি করেন তামিম এবং সৌম্য। তাদের দুজনের জুটি ভাঙেন নিকিথ পেরেরা। বাঁহাতি এই স্পিনারের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে হাঁটু গেড়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে জামাল টডের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ৫৮ রানের ইনিংসের খেলা তানজিদ। নিজের খেলা তৃতীয় বলে পুল করে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে রানের খাতা খুলেছিলেন সৌম্য সরকার। তবে পরের কয়েকটি বল খেলতে বেগই পেতে হয়েছিল তাকে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে কিউই বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে দ্রুত রানও তুলতে থাকেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৪৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সৌম্য।

তামিমের মতো হাফ সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকলেন না সৌম্যও। সামর্থ্য সিংয়ে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়েছেন ৫৬ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলা বাঁহাতি এই ব্যাটার। এদিকে পাঁচে নেমে রানের খাতাই খুলতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়। ডানহাতি এই পেসারের লেগ স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারিতে লেগ সাইডে পুশ করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। তাতে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় হৃদয়কে।

দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর লিটন ও আফিফ হোসেন সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল জুটি গড়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার। তবে সেটা করতে পারেননি তারা দুজন। হৃদয়ের মতো এদিন ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন আফিফও। জেমস হার্টসর্নের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তাতে আফিফ ফিরেয়েছেন মাত্র ১০ রান করে।

১৮৬ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর রিশাদকে সঙ্গে নিয়ে বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন লিটন। রিশাদের সাথে গড়েন পঞ্চাশ পেরোনো জুটিও। সাবধানী ব্যাটিংয়ে নিজের হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন লিটন। জারোড ম্যাকের বলে থার্ডম্যান দিয়ে চার মেরে ৫৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ডানহাতি এই ব্যাটার। যদিও হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ার পরের ওভারেই ফিরেছেন তিনি। সামর্থ্যের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে লং অন দিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়েছেন ৫৫ রান করা এই ব্যাটার।

লিটনকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছিলেন রিশাদ হোসেন। লিটন ফিরে গেলে দলকে এগিয়ে নেয়ার পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। দারুণ ব্যাটিংয়ে সেটা ভালোভাবেই পালন করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। সামর্থ্য সিংয়ে লেগ স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারিতে পুল করে ছক্কা মাত্র ৩৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন রিশাদ।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.