‘এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজি’ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

‘এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত চেয়ারম্যান’ শিরোনামে গত শনিবার (৯ ডিসেম্বর) অর্থসূচকে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে এনআরবি ব্যাংক।

ব্যাংকটির কোম্পানি সেক্রেটারি মো. রেজাউল করিম সই করা প্রতিবাদলিপিতে অর্থসূচকের প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান (সিআইপি)- এর নামে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে এবং এনআরবি ব্যাংক-কে জড়িয়ে মানহানিকর ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা মিথ্যা সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদে এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান (সিআইপি) তার ছেলে, ছেলের বউ, ভাতিজা এবং ভাতিজার বউয়ের নামে বিপুল শেয়ার কিনেছেন এবং তিনি ও তার পরিবার ব্যাংকের মোট শেয়ারের প্রায় এক-চতুর্থাংশ দখল করেছেন মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে, যা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

আরও বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ (২০২৩ সালে সংশোধিত) এর ১৪ক (১) ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ব্যাংকের শেয়ার কেন্দ্রীভূত করা যাবে না এবং কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা কোনো পরিবারের সদস্যগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, একক বা অন্যের সহিত যৌথভাবে বা উভয়ভাবে, কোনো ব্যাংকের শতকরা দশ ভাগের বেশি শেয়ার ক্রয় করিবেন না।’ এখানে আরোও উল্লেখ্য যে, উক্ত আইনে পরিবার বলতে কোনো ব্যক্তির স্ত্রী, স্বামী, পিতা, মাতা, পুত্র, কন্যা, ভাই, বোন এবং উক্ত ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল কোনো ব্যক্তিকে বুঝায়।

এক্ষেত্রে, এনআরবি ব্যাংক-এর কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানী বা কোন পরিবারের সদস্যগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, একক, যৌথ বা উভয়ভাবে কখনোই কোনো সময়েই এনআরবি ব্যাংক-এর শতকরা ১০ (দশ) ভাগের বেশি শেয়ার ধারণ করেননি। এনআরবি ব্যাংক সব সময় আইনি এই বিধান পরিপালনে বদ্ধপরিকর এবং এই বিধানের লঙ্ঘন ঘটেনি। এছাড়া, প্রচলিত আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী পুত্রবধূ, ভাতিজা এবং ভাতিজার বউ কোনক্রমেই একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। প্রকাশিত সংবাদে, এক পরিবার ও অন্য পরিবারের সদস্যগণকে একসাথে সংমিশ্রণ করে শেয়ারহোল্ডিংকে ভুলভাবে হিসেব করে ও আইনবহির্ভুতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, এরআরবি ব্যাংকের সকল শেয়ারহোল্ডারগণ Non-Resident Bangladeshi হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শক্রমে শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের বাইরে অথবা দেশের ভিতরে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারগণের শেয়ার হস্তান্তর/বিক্রির ক্ষেত্রে কোন আর্থিক লেনদেনের মধ্যে ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা থাকে না। প্রকাশিত সংবাদে শেয়ার ক্রয় সংক্রান্ত লেনদেনের যে হিসেব তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারগণের নিতান্তই ব্যক্তিগত লেনদেনের আওতায় পড়ে। ব্যাংকের সকল শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয় এবং এ সম্পর্কিত যাবতীয় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও প্রাসঙ্গিক সব আইন অনুযায়ী সম্পাদন করা হয়েছে এবং শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয় সংক্রান্ত লেনদেনসমূহ বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া, প্রতিটি শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয় এবং এ সম্পর্কিত ডকুমেন্টস রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস (আরজেএসি) থেকে প্রচলিত বিধি মোতাবেক প্রত্যয়ন করা হয়। পাশাপাশি, এনআরবি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারগণ সকলে এনজাররি হওয়ায়, প্রত্যেক শেয়ার হস্তান্তর সম্পন্ন হবার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবহিত করা হয়। সুতরাং, জনাব মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান কর্তৃক প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় করে বেনামে শেয়ার ক্রয় অথবা শেয়ার দখলের কোনো প্রশ্নই আসেনা।

আরও বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এর ১৪ক(২) ধারা অনুযায়ী ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়ের সময় ক্রেতা বেনামিতে শেয়ার ক্রয় করিতেছেন না এ মর্মে দাখিলকৃত শপথপত্র বা ঘোষণাপত্র ব্যাংকের নিকট সংরক্ষিত আছে। সুতরাং প্রকাশিত সংবাদে জনাব মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান (সিআইপি) বেনামে শেয়ার কেনার মাধ্যমে আইনের এই ধারা লঙ্গন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে যা সম্পূন্য ভিত্তিহীন, অসত্য ও মানহানিকর।

প্রতিবেদকের বক্তব্য

এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান ব্যাংক কোম্পানি আইনের তোয়াক্কা না করে তার পরিবারের লোকজনকে দিয়ে বেনামে শেয়ার ক্রয় করিয়েছেন। মাহতাবুর রহমান নিজ ও স্ত্রীর নামে, ছেলে, ছেলের বউ, চাচা, দুই ভাতিজা ও তাদের স্ত্রীদের নামে শেয়ার কিনেছেন। মাহতাবুর রহমান ও তার পরিবার ব্যাংকটির মোট ২৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন। অথচ ব্যাংক কোম্পানি আইনে কোনো পরিবার একটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারবে। অর্থাৎ ব্যাংক কোম্পানি আইন স্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন মাহতাবুর রহমান। আর এসব দুর্নীতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তে ধরা পড়েছে।

এছাড়াও ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বেনামে আরো কত শেয়ার কিনেছেন তা জানতে চেয়ে কাগজপত্র চাইলেও এনআরবি ব্যাংক বিএফআইইউকে দেয়নি। তাই আরো কত শেয়ার বেনামে কিনেছেন চেয়ারম্যান তা জানতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এর ফলে বিএফআইইউ’কে তথ্য প্রদান না করার অভিযোগ করা হয়েছে।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.