ঋণ দিয়ে বড় আর্থিক ঝুঁকিতে জনতা ব্যাংক

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে নামে-বেনামে বড় অঙ্কের ঋণ দিয়ে ব্যাংকটির অবস্থা এখন নাজুক। ব্যাংকটির ৭৭ শতাংশ ঋণ পাঁচ শাখায় কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে। খেলাপি ঋণও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এর ফলে বড় আর্থিক ঝুঁকিতে পড়েছে ব্যাংকটি।

শাখাগুলোর মধ্যে রয়েছে লোকাল অফিস শাখা, জনতা ভবন করপোরেট শাখা, মতিঝিল করপোরেট শাখা, দিলকুশা করপোরেট শাখা এবং চট্রগ্রাম সাধারণ বিমা ভবন করপোরেট শাখা।

এবিষয়ে জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুল জব্বারকে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেন নি। এর ফলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির বর্তমান শাখার সংখ্যা ৯২৩টি। চলতি বছর জুন শেষে জনতা ব্যাংকের মোট ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। কিন্তু ঋণের বেশিরভাগ এখন কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে মাত্র পাঁচ শাখায়, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৭১ হাজার ৯৯২ কোটি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর অর্থসূচককে বলেন, বেশি ঋণ অল্প যায়গার মধ্যে থাকলে ঝুঁকি থাকে। তবে দক্ষতাসম্পন্ন ও মান ভালো এরকম কর্পোরেটরদেরকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে কিনা সেটা মূল বিষয়। কু-কর্মগুলো এসব শাখাতেই হয়ে থাকে। তাই যাদেরকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো দরকার।

এর আগে ২০২১ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের শীর্ষ পাঁচটি শাখাকে ঋণ বিতরণে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের তিন-চতুর্থাংশ জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস শাখা, জনতা ভবন করপোরেট শাখা, চট্টগ্রাম সাধারণ বীমা ভবন করপোরেট শাখা, দিলকুশা করপোরেট শাখা থেকে বিতরণ করা হয়েছিলো।

তখন মোট বিতরণ করা ঋণের ৭২ শতাংশ এ কয়েকটি শাখায় কেন্দ্রীভূত হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ছিলো ব্যাংকটির বিরুদ্ধে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, এসব শাখায় বড় গ্রাহক খেলাপি হয়ে পড়লে বা ঋণ আটকে গেলে আদায় করতে বেগ পেতে হয়। এজন্য ঋণ বিতরণে অধিক গ্রাহক ও এলাকা বিস্তৃত করার কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়। খেলাপি ঋণের এই পরিমাণ গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।

এছাড়া গত জুন শেষে বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলার মধ্যে নিস্পত্তির অপেক্ষায় ছিল ৭২ হাজার ৭১২টি মামলা। এসব মামালায় আটকা আছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা।

অর্থসূচক/ মো.সুলাইমান/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.