‘আর্থিক খাতে সুশাসন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে’

রপ্তানিকারকেরা আমদানিকারকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে অনানুষ্ঠানিকভাবে মুদ্রার দর ঠিক করছে। ব্যাংকগুলোও অনানুষ্ঠানিক দরে লেনদেন করছে বলে শোনা যায়। বর্তমানে আর্থিক খাতে সুশাসন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন।

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে করোনা-পরবর্তী সময়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে এক্সচেঞ্জ রেট বা মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মনজুর হোসেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে আর্থিক খাতে সুশাসন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বাজারেও তেমন শৃঙ্খলা নেই। এখন রপ্তানিকারকেরা আমদানিকারকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে অনানুষ্ঠানিকভাবে মুদ্রার দর ঠিক করছে। ব্যাংকগুলোও অনানুষ্ঠানিক দরে লেনদেন করছে বলে শোনা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে জরিমানার কথা জানিয়েছিল। এমন পরিস্থিতি সামনে রেখে বিনিময় হারকে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

মনজুর হোসেন বলেন, ‘অনেক দেশ বিভিন্ন সময়ে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকেরা কী করবেন, জানি না। তবে আমাদের অর্থনীতির মৌলিক নীতিগুলো মেনে চলা উচিত।’

বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক বলেন, বিনিময় হারের সঙ্গে সুদহার ও মূল্যস্ফীতির মতো অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের সম্পর্ক রয়েছে। একটি আরেকটিকে প্রভাবিত করে। বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলে অন্যান্য সূচকও বাজারের ওপর ভিত্তি করে বিবেচনা করা প্রয়োজন। প্রশ্ন হলো সেটা করা হবে কি না। এ জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা রয়েছে কি না, তা-ও দেখা প্রয়োজন।

বর্তমানে দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুদ্রার বিনিময় হারের অনানুষ্ঠানিক দর মানা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য সূচকে। এ নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ দেখা যায় না বলে মন্তব্য করেন মনজুর হোসেন।

মনজুর হোসেন আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হয়েছিল। করোনার সময় অপ্রত্যাশিতভাবে প্রবাসী আয় বেড়ে যায়। রপ্তানিও মোটামুটি অব্যাহত থাকে। এর পাশাপাশি আমদানি কমে যায়। এ কারণে রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। ওই সময় বিনিময় হার কিছুটা কমানো গেলে বাজার থেকে ডলার ঋণ করে রিজার্ভে তা কৃত্রিমভাবে যোগ করার প্রয়োজন ছিল না। রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ায় তা ব্যবহারের জন্য একধরনের চাপ তৈরি হয়। অর্থাৎ ওই সময় নীতিনির্ধারকদের দূরদৃষ্টির অভাব ছিল। বিনিময় হার নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে এই দুর্বলতা বা ত্রুটিযুক্ত নীতি যা-ই বলি না কেন, এর কারণে অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। এর ফল বর্তমানে দেখা যাচ্ছে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.