২০১৮ সালের রাতের ভোট প্রমাণে ১৮ কোটি সাক্ষী হাজির করেন: হাইকোর্ট

২০১৮ সালের রাতের ভোটের অভিযোগ প্রমাণে ১৮ কোটি সাক্ষী হাজির করতে বলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ২০১৮ সালে রাতে ভোটের কথা বলছেন। এসব বক্তব্য রাজনৈতিক মঞ্চে দেবেন। আদালতে প্রমাণ ছাড়া কথা বলবেন না। রাতে ভোটের বিষয়ে কী কোনো মামলা হয়েছে। কোনো সাক্ষী প্রমাণ থাকলে দিন। ধারণার ওপর ভিত্তি করে কথা বলবেন না। রাজনৈতিক বা গণমাধ্যমের কোনো বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো অভিযোগ আদালত আমলে নিতে পারে না।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) আগামী ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন।

শুনানিকালে রিটের আবেদনকারী আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ বলেন, মাই লর্ড একাদশ জাতীয় সংসদ এখনো বহাল রয়েছে। পাঁচ বছরের মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। এই সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি শেষ হবে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হলে তখন দুটি সংসদ হবে। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। অন্যথায় সংসদ সদস্যের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬০০। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন পেছানোর সুযোগ রয়েছে।

এ সময় হাইকোর্ট জানতে চান আমাদের সুপ্রিম পাওয়ার কী? তখন অ্যাডভোকেট ইউনূস আলী বলেন, আমাদের সুপ্রিম পাওয়ার হলো সংবিধান। কিন্তু, সংবিধানের ৬৬(২) ছ-অনুযায়ী তো পার্লামেন্ট বহাল থাকাবস্থায় নির্বাচন করা যাবে না। এমপি, মন্ত্রী পদ তো লাভজনক পদ। তারা ক্ষমতা হোল্ড করছেন। তাহলে এ পার্লামেন্ট থাকা অবস্থায় যদি নতুন পার্লামেন্ট করা হয়, তাহলে এমপি হবে ৬০০ জন। সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন অনুষ্ঠানের আরও পাঁচ মাস সময় রয়েছে। অথচ, তড়িঘড়ি করে নির্বাচন করতে চাইছে কমিশন। অনেক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় নির্বাচন প্রিম্যাচিউরড। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন করতে হলে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, মন্ত্রিসভা ছোট করতে হবে। এসব কিছুই করা হয়নি।

হাইকোর্ট বলেন, নির্বাচন কমিশনের সংবিধানের মধ্যে থেকে তাদের সুবিধামতো সময়ে নির্বাচন দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে। আর এক সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তো ২০১৮ সালে পার্লামেন্টে সেটেল হয়ে গেছে।

জবাবে আইনজীবী বলেন, সংবিধান গণতন্ত্রের কথা বলেছে। অথচ, গণতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন হচ্ছে না। কেননা এবারের নির্বাচনে সব দল অংশ নিচ্ছে না। এত তড়িগড়ি করে তফসিল দিল যে অনেক গঠনতান্ত্রিক দল অংশ নিতে পারছে না। জবাবে আদালত বলেন, এটা দিয়ে আপনি কী বুঝাতে চেয়েছেন? আমেরিকা, ভারতে কয়টি দল? জবাবে আইনজীবী বলেন, দুই-তিনটি দল।

এ সময় আদালত বলেন, মিডিয়াতে দেখলাম দেশের ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জবাবে আইনজীবী বলেন, এবারের নির্বাচনে যেসব দল এখনো প্রার্থী হচ্ছে তারা তো একটিও আসন পাবে না। এ সময় আদালত বলেন, নির্বাচন না হলে সংবিধান শূন্য থাকবে। জবাবে এ আইনজীবী বলেন, সংসদ ভেঙে দিতে হয় নির্বাচনের ৯০ দিন আগে। ২০১৪ সালে ১৫৪টি আসনে ভোট ছাড়া নিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০১৮ সালে আমি নির্বাচন করেছিলাম। সেখানে দিনের ভোট আগের রাতে করানো হয়। যে কারণে কেউ ভোট দিতে পারেনি।

এ সময় আদালত জানতে চান, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগের রাতে ভোটের বিষয়ে আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে বা সাক্ষী আছে? জবাবে আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ বলেন, মাই লর্ড, সাক্ষী দেশের ১৮ কোটি জনগণ। আমি নিজে প্রার্থী ছিলাম ঢাকা-৮ আসনে থেকে। দেখলাম আগের দিন রাতে ভোট হয়ে গেছে।

এ সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হয়েছে। রাতের ভোটের অভিযোগ প্রমাণে সাক্ষ্যপ্রমাণ ও ১৮ কোটি সাক্ষী হাজির করেন। যেদিন ১৮ কোটি সাক্ষীকে হাজির করতে পারবেন, সেদিন পর্যন্ত আমরা আপনার রিট আবেদন স্থগিত রাখব।

এ সময় আদালত জানতে চান, আপনি মামলা করলেন না কেন? জবাবে আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ বলেন, মামলা তো করতে হয় ট্রাইব্যুনালে। এ মামলা করার পর নিষ্পত্তি হতে হতে পাঁচ বছর পার হয়ে যায়। শুনানি মুলতবি করা হোক।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী এবং নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ রিট আবেদনের বিরোধিতা করে হাইকোর্টকে বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় কোনো আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন হয়নি। অগ্রহণযোগ্য রিট দায়ের করে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন উল্লেখ করে তারা রিট আবেদনকারী ইউনুস আলী আকন্দের শাস্তির আবেদন জানান।

শুনানি শেষে আদালত রিট আবেদনের ওপর আদেশের জন্য ১০ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন। ইউনুস আলী আকন্দকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে লিখিতভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে বলেছে আদালত।

উল্লেখ্য, গত ২৯ নভেম্বর একটি সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি সংসদ নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, মন্ত্রীপরিষদ সচিব, আইন সচিবসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয় রিট আবেদনে। আবেদনে আদালতের কাছে নির্বাচনের তফসিল স্থগিত করে পুনঃতফসিল দেওয়ার নির্দেশ চাওয়া হয়।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.