রওশনের বিদায় ঘণ্টা কী তবে বেজেই গেল?

সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা থেকে একেবারেই সংসদের বাইরে ছিটকে পড়তে চলেছেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। তার প্রয়াত স্বামী হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টির মনোনয়ন তালিকায় স্থান পায়নি তার অনুসারী কোনো নেতা। এমনকি বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাতে তার জন্য প্রস্তাবিত ময়মনসিং-৪ আসনেও দলটি নতুন প্রার্থীর মনোনয়ন দিয়েছে। অন্যদিকে রওশন ও এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ ওরফে সাদের প্রার্থিত রংপুর-৩ আসনে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের নিজেই প্রার্থী হয়েছেন।

এদিকে দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের গাড্ডা থেকে উদ্ধারের আশায় প্রায় সপ্তাহখানেক আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের অনুরোধ জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। এদিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে অলৌকিক কিছু না ঘটলে জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচনের আর কোনো সুযোগ থাকছে না রওশনের জন্য।

রাজনীতির মাঠে খেলার চিত্র দ্রুতই বদলে যায়। তাই দু’তিন মাস আগেও সরকার বা আওয়ামী লীগের কাছে রওশন এরশাদের যে কদর ছিল, তার ছিটেফোঁটাও এখন নেই বলে মনে করা হচ্ছে। আর এর পেছনে থাকতে পারে বেশ কিছু কারণ। প্রথমত রওশন এরশাদের অনেক বয়স হয়েছে, ভুগছেন নানা রোগ-ব্যাধিতে। শারীরিকভাবে ফিট না থাকায় সংসদে ভূমিকা রাখা অথবা দলের উপর নিয়ন্ত্রণ- কোনোটিই ঠিকভাবে হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

দ্বিতীয়ত: জাতীয় পার্টির উপদলীয় কোন্দলে ইতোমধ্যে তিনি ও তার অনুসারীরা বেশ কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। তাই সরকার তাকে কাছে টানতে চাইলে বা অগ্রাধিকার দিলে জাতীয় পার্টির বড় অংশের নির্বাচনে আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন দেখানোর জন্য জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ বেশ জরুরি।

অন্যদিকে সরকারের এজন অনুগত বিরোধী দলের নেতা প্রয়োজন হলেও জাতীয় সংসদে বক্তৃতা এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যাতে তা মোটাদাগে ধরা পড়ে না যায়, সেটিও নিশ্চিত হতে চায় সরকার। কিন্তু বর্তমান সংসদে রওশন এরশাদ এমন সব বক্তৃতি দিয়েছেন, যাতে বিরোধী দলীয় নেতার কোনো ‘ফ্লেভার’ ছিল না। বরং তিনি বিরোধী দলের নেতা নাকি সরকার দলীয় সাংসদ- তা নিয়েই দেখা দেয় ধোঁয়াশা। তাই সংসদে সক্রিয় বিরোধী দল আছে-এমনটি প্রমাণে রওশন এরশাদের চেয়ে দলে তার প্রতিপক্ষ জিএম কাদের বেশি উপযোগী।

তাই সব মিলিয়ে সরকারের চাওয়া পুরো জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে না আনতে পারলে রওশনের পরিবর্তে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশের অংশগ্রহণ।

জাপা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে জি এম কাদের তেমন আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু সরকারের চাপে অবস্থান বদলাতে হয়। আর সুযোগ পেয়ে সরকারের কাছ থেকেও কিছু প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন তিনি। মোটাদাগে দুটি শর্তে জি এম কাদের নির্বাচনে যেতে সম্মত হন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একটি হলো নির্বাচনে জয়ী হলে দলীয় প্রধান হিসেবে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন। এ ছাড়া তাঁর সিদ্ধান্তে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। এতে কারও হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।

জি এম কাদের দেওয়া শর্তগুলোর ব্যাপারে সরকারের ইতিবাচক সাড়ার মধ্য দিয়েই মূলত রওশন এরশাদের রাজনৈতিক মৃত্যু বীজ রোপিত হয়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজনীতির খেলা এমনই। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে কেউ পুছেও না।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.