ফিলিস্তিনের একজন তরুণ হ্যাকারকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের হত্যাপ্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি। ফিলিস্তিনের এই তরুণ হ্যাকার ইহুদিবাদী ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম দুই দফায় হ্যাক করেছিলেন।
২০১৫ ও ’১৬ সালে ওমর এ নামে এই ফিলিস্তিনি তরুণ আয়রন ডোমের বিরুদ্ধে হ্যাকিং অপারেশন চালান। তাতে হামাসের সামরিক শাখা ইজাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড বিশেষ সুবিধা পায়। বিষয়টি এক পর্যায়ে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ টের পায় এবং তাকে আইটি কোম্পানিতে চাকরি দেয়াসহ নানা প্রলোভনের মাধ্যমে নিজেদের গোয়েন্দা জালের ভেতরে নেয়ার চেষ্টা করে মোসাদ। কিন্তু ফিলিস্তিনি তরুণ বারবার এসব লোভনীয় প্রস্তাব নাকচ করেন তবে একপর্যায়ে তিনি প্রায় ইসরাইলের প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে একটি চাকরি নিতে গিয়েছিলেন।
মোসাদ তাকে অপহরণের চেষ্টা করছে এ বিষয়টি বুঝতে পারার পর ফিলিস্তিনের এ তরুণ হ্যাকার ২০২০ সালে তুরস্কে চলে যান। তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল। ২০২২ সালের জুন মাসে ওমর একটি অনলাইন প্রকল্পে চাকরির প্রস্তাব প্রায় গ্রহণ করে ফেলেছিলেন এবং ওই চাকরির অংশ হিসেবে তাকে বিদেশ সফরের প্রস্তাব দেয়া হয়। এ প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল মোসাদ সেখান থেকে তাকে অপহরণ ও তেল আবিবে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কিন্তু বিষয়টি জানতে পেরে এমআইটি ওমরের সাথে যোগাযোগ করে এবং তাকে এই প্রকল্প সম্পর্কে সতর্ক করে।
ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিস্তিনের এ হ্যাকার মালয়েশিয়ায় অবকাশ কাটাতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থা তখনও বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে এবং ওমরের মোবাইল ফোনে ট্রাকিং সফটওয়্যার ইনস্টল করে দেয়। পাশাপাশি মালয়েশিয়া থেকে তাকে অপহরণ করা হতে পারে এমন আশঙ্কার বিষয়েও তাকে সতর্ক করা হয়।
মালয়েশিয়া যাওয়ার কয়েক দিন পরেই প্রকৃতপক্ষে তাকে কুয়ালালামপুর থেকে অপহরণ করা হয় এবং রাজধানী থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী কোনো একটি দুর্গম এলাকার একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করা হয়। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কিভাবে তিনি আয়রন ডোম হ্যাক করেছেন। অপহরণের বিষয়টি এমআইটি জানতে পারার পর তুরস্কের সরকারি কর্মকর্তারা মালয়েশিয়া সরকারের কাছে সাথে যোগাযোগ করে এবং ওমরের সেলফোনে থাকা ট্রাকিং সফটওয়্যার এর মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে তার অবস্থান চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়।
এক পর্যায়ে মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ওই বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায় এবং ওমরকে উদ্ধার করে। ও ঘটনায় ১১ জন সন্দেহভাজন অপহরণকারীকে আটক করা হয়। এরপর ওমর তুরস্কে ফিরে যান এবং এমআইটি তাকে একটি নিরাপদ বাড়ি দেয়।
এর আগে তুরস্কের বসবাস করা ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর মোসাদের গুপ্তচর বৃত্তির বিষয়টিও এমআইটি উন্মোচন করেছিল। এছাড়া, মোসাদের আরো গুপ্তরচরবৃত্তির ঘটনা নস্যাৎ করেছে তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি। পার্সটুডে
অর্থসূচক/এএইচআর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.