প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে মধুমতি ব্যাংক

দেশের সরকারি-বেসরকারি নয় ব্যাংক নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে চতুর্থ প্রজন্মের মধুমতি ব্যাংক। এই ব্যাংকটির ঘাটতি ৯০ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, খেলাপিসহ অন্যান্য ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির প্রভিশনের প্রয়োজন ছিল ১৯১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংকটি রেখেছে ১৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকটির ঘাটতি ৯০ লাখ টাকা।

আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী ব্যাংকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ঋণের মান বিবেচনায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকগুলো তার মুনাফা কিংবা শেয়ারহোল্ডারদের মূলধন থেকে চাহিদা মতো সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, সরকারি-বেসরকারি ৯টি ব্যাংক নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের ঘাটতির পরিমাণ ২৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি তিন ব্যাংক এবং বেসরকারি ছয় ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।

রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে সরকারি বেসিক ব্যাংকের। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। অপরদিকে প্রভিশন ঘাটতির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটি ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঘাটতিতে পড়েছে।

বর্তমানে অশ্রেণিকৃত ঋণের ধরন অনুযায়ী দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হয়। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো তাদের নিয়মিত বা অশ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে পরিচালন মুনাফার ০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত, ‘সাব স্ট্যান্ডার্ড’ বা নিম্নমানের শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং ‘ডাউটফুল’ বা সন্দেহজনক শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ আর ‘মন্দ’ মানে শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয় শত ভাগ।

এক সময় কোনো ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি থাকলে শুধু সতর্ক ও ঘাটতি মেটাতে দিকনির্দেশনা দিত বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে কোনো ব্যাংকে টানা দুই বছর ঘাটতি থাকলে তার বড় অঙ্কের জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিলের কথা বলা আছে। এসব কারণে নানা উপায়ে প্রভিশন ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বাণিজ্যিক ২৮টি ব্যাংক কোনোমতে এ অর্থ রাখতে পেরেছে। অর্থাৎ এসব ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে কোনো ঘাটতি নেই, উদ্বৃত্তও নেই। সরকারি-বেসরকারি ওই নয় ব্যাংক নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। বাকি ব্যাংকগুলোতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি উদ্বৃত্ত আছে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

অর্থসূচক/এমএইচ/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.