কোন দলের হয়ে নির্বাচনে যাচ্ছেন মেজর (অবঃ) আখতারুজ্জামান রঞ্জন?

নানা বিতর্কিত কাণ্ডে তুমুল আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিক মেজর আখতারুজ্জামান রঞ্জন (অবঃ) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চলেছেন। বিএনপির সাবেক এই নেতা লাগামহীন কর্মকাণ্ডের জন্য নিজ দল থেকে পাঁচবারের মতো বহিষ্কার হয়েছেন। বর্তমানেও তিনি বহিষ্কৃত অবস্থায় আছেন।

মেজর আখতার (অবঃ) বিএনপি থেকে একাধিকবার জাতীয় সংসদের সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন।

সাবেক এই এমপি কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তবে কোন দল থেকে তিনি নির্বাচন করবেন তা পরিস্কার করেননি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে যায়, তাহলে বিএনপির প্রার্থী হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। একটু এগিয়ে থাকার জন্য আগেভাগে মনোনয়নপত্র কিনেছেন বলে দাবি তাঁর।

কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে না এলেও তিনি প্রার্থী হবেন কি-না; আর হলেও কোনও দল থেকে হবেন নাকি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন তা পরিস্কার করেননি তিনি।

তবে তার নির্বাচনী এলাকার অনেকেই মনে করেন, বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও মেজর আখতার (অবঃ) ঠিকই নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। সে ক্ষেত্রে তিনি কোনো একটি ‘কিংস পার্টি’ থেকে প্রার্থী হতে পারেন। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।

উল্লেখ, বিএনপির কিছু বহিষ্কৃত, নানা কারণে নিষ্ক্রিয় ও কিছু সুবিধাবাদী নেতার সমন্বয়ে ইতোমধ্যে দুটি দল গঠিত হয়েছে, যারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, মনোনয়নপত্র বিক্রি করছে। দল দুটি হচ্ছে- তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম)। দল দুটি এরই মধ্যে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

আখতারুজ্জামান রঞ্জনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের ঘটনায় অবশ্য কোনো চমক দেখছেন না তার নির্বাচনী এলাকার লোকজন। তাদের মতে, আখতারুজ্জামান রঞ্জন যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, গত জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত তার বৈঠকের পর থেকেই তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছিল। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে যখন দা-কুড়ালে সম্পর্ক, তখন সাবেক বিএনপি নেতার সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটি যথেষ্ট ইঙ্গিতবহ।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর মেজর আখতারুজ্জামান রঞ্জন (অব) গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তার কাছ থেকে দুটি বিষয় জানতে চেয়েছিলেন। এর একটি হচ্ছে- বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি-না; আর অন্যটি হচ্ছে- তিনি নিজে নির্বাচন করার কথা ভাবছেন কি-না।

রঞ্জনের নির্বাচনী এলাকার অনেকেই মনে করেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ইতিবাচক কোনো সংকেত পেয়েই হয়তো তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। কারণ কিশোরগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচন করা সহজ হবে না। এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন-বর্তমান সংসদ সদস্য ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বা উপমহাপুলিশ পরিদর্শক আবদুল কাহার আকন্দ, সাবেক সংসদ সদস্য ও পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ আফজল। এছাড়া আওয়ামীলীগের আরও ৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। এমন অবস্থায় উচ্চ পর্যায়ের সবুজ সংকেত ছাড়া মাঠে নামার দুঃসাহস দেখানোর মতো বোকা নন মেজর রঞ্জন (অবঃ)।

আর এ কারণেই মেজর আখতারের (অবঃ) মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিষয়টি আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। দল যদি কৌশলগত কারণে তাকে বিশেষ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে অন্য সবার কপাল পুড়বে-এটিই হচ্ছে তাদের আশংকা।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.