শিফা হাসপাতালে সুড়ঙ্গ পাওয়ার ইসরাইলি দাবি প্রত্যাখ্যান হামাসের

ইসরাইলি সেনারা গাজা উপত্যকার প্রধান হাসপাতাল আল-শিফা মেডিক্যাল কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে টানেলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার যে দাবি করেছে তাকে ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মুনির আল-বুর্শ।

আল-জাজিরাকে তিনি বলেছেন, ইসরাইলিরা গত আট দিন ধরে হাসপাতালটিতে অবস্থান করলেও এখন পর্যন্ত কিছুই খুঁজে পায়নি।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রেসেন্ট ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালে ৩১টি শিশু সময়ের আগেই জন্মেছিল। তাদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে দক্ষিণ গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের রাফাহর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। গাজা ভূখণ্ডের হাসপাতাল বিষয়ক ডিজি মোহাম্মেদ জাকুত বলেছেন, শিশুদের মিশরে নিয়ে যাওয়া হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালে এখনো ২৯১ জন রোগী ও ২৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী আছেন। তাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আল-শিফা হাসপাতাল এখন মৃত্যু-এলাকায় পরিণত হয়েছে।

শিশু হত্যাকারী ইসরাইল সরকার চলমান গাজা যুদ্ধেরও বহু আগে থেকে দাবি করে আসছিল, উপত্যকার আল-শিফা হাসপাতালের নীচে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের কমান্ড সেন্টার ও টানেল রয়েছে। তবে হামাস এ দাবি বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।

ইসরাইলি সেনারা গত ১২ নভেম্বর সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে শিফা হাসপাতালে আগ্রাসন চালিয়ে এটি দখল করে নেয়। ফল তাদের সামনে তাদের আগের দাবিগুলোর সত্যতা প্রমাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাদের আগের দাবি প্রমাণ করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবেও তারা প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে। কিন্তু ইহুদিবাদীদের পক্ষে সেসব দাবি প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।

তবে রোববার ইহুদিবাদী সেনারা দু’টি আলাদা ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে দাবি করে, তারা হাসপাতালে একটি টানেল খুঁজে পেয়েছে। ফুটেজে যে টানেলটি দেখানো হয়, তার অপর মুখ বন্ধ পাওয়া যায় এবং তার ভেতরে কোনো হামাস যোদ্ধা কিংবা কোনো বন্দিকে দেখা যায়নি। সেইসঙ্গে তারা অপর ভিডিওতে দাবি করে, গত ৭ অক্টোবর হামাস তাদের হাতে আটক দু’জন বন্দিকে এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল; কাজেই তাদের দাবি অনুযায়ী, এই সংগঠন যে হাসপাতালকে তাদের সামরিক কাজে ব্যবহার করে তা প্রমাণিত হয়েছে।

দখলদার সেনাদের এসব দাবির জবাব দিয়েছে হামাস। সংগঠনটি তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলি সেনারা টানেল খুঁজে পাওয়ার যে দাবি করেছে সেটি হাসপাতালের ভেতরে নয় বরং হাসপাতাল থেকে বেশ খানিকটা দূরে অবস্থিত একটি গর্ত। ভিডিওটিতে একটি পানির কূপ ও আরেকটি টানেলের ভিডিও জোড়া লাগিয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে বলে হামাসের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

পক্ষান্তরে দুই বন্দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে হামাস বলেছে, তারা শুরু থেকে বলে এসেছে যে, ৭ অক্টোবরের অভিযানের দিন তাদের হাতে আটক ইসরাইলি বন্দিদের মধ্যে যারা আহত ও অসুস্থ ছিল তাদেরকে গাজার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। এরপর সুস্থ হলে তাদেরকে গোপন ও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কাজেই হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা যে ভিডিও ইসরাইলিরা দেখিয়েছে তাতে হামাসের কোনো গোপন তৎপরতা ধরা পড়েনি।

এদিকে গত শনিবার মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছিল, পণবন্দিদের মুক্তি নিয়ে ইসরায়েল, আমেরিকা ও হামাস মতৈক্যের কাছাকাছি পৌঁছেছে। ইসরায়েল পাঁচদিন আক্রমণ বন্ধ রাখবে। বিনিময়ে হামাস পণবন্দিদের মুক্তি দেবে।

কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরকম কোনো সমঝোতা হয়নি। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘পণবন্দিদের নিয়ে প্রচুর গুজব ছড়াচ্ছে। অধিকাংশ রিপোর্টই সত্য নয়। এখনো পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি।’

হোয়াইট হাউসে জাতীয় সুরক্ষা কাউন্সিলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘আমরা সমঝোতা করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু এখনো কিছু হয়নি। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।’ সূত্র: পার্সটুডে, ডিডাব্লিউ, এপি, এএফপি, রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.