প্রধান ৩ দলকে ডোনাল্ড লুর চিঠি: যা বলল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে তিনটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে ‘শর্তহীন সংলাপের’ আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক সোমবার (১৩ নভেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে ওই সাংবাদিক বলেন, ‘সংলাপ করার জন্য বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছেন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। কিন্তু, অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক নেতা কারাগারে থাকা অবস্থায় সংলাপ কীভাবে হবে? এবং আমি ভাবছি, বিরোধী দলের সেই চিঠি কে নেবে, যেখানে সরকার বিরোধীদের ক্র্যাকডাউন (ধরপাকড়) করছে। ক্ষমতাসীন সরকারের এই ক্র্যাকডাউন অব্যাহত রয়েছে এবং অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? এমন পরিস্থিতিতে সংলাপ কীভাবে হবে?’

জবাবে চিঠির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে মুখপাত্র মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে আমাকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন সাংবাদিকের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই এবং আমি তা নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকব। বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ নেয় না। আমরা নির্দিষ্ট কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করি।’

সেই সাংবাদিক আবারও প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনি জানেন, বাংলাদেশ ও ঢাকা গাজার মতো আরেকটি উত্তপ্ত স্থান। খুব শিগগিরই এটি গাজা উপত্যকার মতো হয়ে যাবে, যদি না অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়। বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম দেশ, যেখানে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষ গণতন্ত্র এবং অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পক্ষে। বাংলাদেশের নাগরিকরা খুব আশাবাদী হয়ে ওঠে যখন কি না আমেরিকা মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে ভূমিকা পালন শুরু করে। আওয়ামী লীগ ছাড়া সব প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কাজ করছে। কেন মার্কিন সরকারকে বাংলাদেশের ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে?’

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘অল রাইট, লেট মি (ঠিক আছে, আমাকে বলতে দিন)।’ এ সময় ওই সাংবাদিক ফের প্রশ্ন করেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি বিশ্বাস করে, ভারতের ক্ষমতাসীনরা বাংলাদেশে কিছু করছেন?’

উত্তরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘আমি অনেকবার যা বলেছি, তা-ই বলতে চাই- আমরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যৎ তার জনগণের দ্বারা নির্ধারিত হওয়া উচিত।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। সোমবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে ডোনাল্ড লু’র চিঠিটি হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। চিঠিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপে বসার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে লু’র চিঠি নিয়ে সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরার বিষয়ে দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।’

স্টিফেন ইবেলি জানান, ‘চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত করে না। যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে কোনও ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়া সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা করা ভিসানীতির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।’

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.