লেবাননকে পুরোমাত্রার যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিলো ইসরায়েল

হামাসের সাথে চলমান যুদ্ধের মাঝেই লেবানন-ইসরায়েলের ‘পুরোমাত্রার যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই যুদ্ধ শুরুর ব্যাপারে নিজের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, গত কয়েক দিনে ইসরায়েল এবং লেবাননের ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে ‘পুরোমাত্রার যুদ্ধ’ শুরুর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গাজা উপত্যকার বৃহত্তম দুই হাসপাতালে চলমান সংঘর্ষের মাঝে এই যুদ্ধের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

মার্কিন এই সংবাদমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা হুঁশিয়ার করে বলেছেন, লেবাননের সাথে যদি পূর্ণাঙ্গ সংঘাত শুরু হয় তাহলে তারা হিজবুল্লাহর সব শক্ত ঘাঁটি ধ্বংস করে দেবে।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সাথে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ ৩৮ দিনে গড়িয়েছে। উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলায় ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। ইসরায়েলি টানা হামলায় গাজায় নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। উপত্যকায় জ্বালানি, পানি ও খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছেন লাখ লাখ মানুষ।

এর মাঝেই উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল হামলায় গাজার উত্তরে লাখ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বাসিন্দাদের গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার জন্য দৈনিক চার ঘণ্টার বিরতি দিলেও তারা আক্রান্ত হচ্ছেন।

গাজা উপত্যকার দুটি হাসপাতালে থাকা হাজার হাজার রোগী ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন। জ্বালানি সংকটের কারণে হাসপাতালের জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক রোগী মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। সোমবার গাজার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতালে সোমবার ইসরায়েলি বাহিনী বোমা ও রকেট হামলা চালিয়েছে। একই সাথে বিমান থেকেও গোলা ছুড়েছে হাসপাতালের আশপাশে। এতে হামাসের অন্তত ২১ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

হামাসের সাথে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে শুরু থেকেই ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে লেবাননের হিজবুল্লাহ। সীমান্তে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘাত গত কয়েক দিনে তীব্র আকার ধারণ করেছে। রোববার হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে বেশ কয়েকজন বেসামরিক ও সেনাসদস্য হতাহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে গোষ্ঠীটি। উভয়পক্ষের মাঝে পাল্টাপাল্টি হামলা-পাল্টা হামলা অব্যাহত রয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পরদিন থেকেই প্রত্যেক দিন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাথে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের প্রাণঘাতী সংঘর্ষ চলছে। গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইসরায়েলের সাথে সংঘাতে এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহর ৭০ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। একই সময়ে লেবাননের কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকও ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।

হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ চলতি সপ্তাহে দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন, ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে জড়াতে চায় না তারা। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, হিজবুল্লাহ সীমান্ত হামলা বন্ধ না করলে গাজার মতো ধ্বংসযজ্ঞের পরিণতি ভোগ করতে পারে বৈরুত।

সূত্র: আলজাজিরা, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.