৩ দফায় আকুর দেনা শোধ ৩৪৯ কোটি ডলার

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) মধ্যে রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) তিন দফা দেনা শোধ করা হয়েছে। এতে ডলার ব্যয় হয়েছে ৩৪৯ কোটি ডলার।

এর মধ্যে প্রথম দুই দফায় পরিশোধ করা হয়েছিলো ২২৮ কোটি ডলার। এরপর আজ আকুর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের দায় ১২১ কোটি ডলার শোধ করা হয়েছে। এর ফলে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসের শুরুর দিন নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলার। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলারে। আলোচ্য সময়ে আকুর রিজার্ভ কমেছে ৫৩০ কোটি ডলার। আর জুলাইয়ের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ১২০ কোটি ডলার। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪২ কোটি ডলারে। গ্রস হিসাবে আলোচ্য সময়ে রিজার্ভ কমেছে ৪৭৮ কোটি ডলার।

এদিকে গত ছয় দিনের ব্যবধানে দেশের নিট রিজার্ভ কমেছে ১২১ কোটি ডলার। চলতি মাসের শুরুর দিনে নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৬ কোটি ডলার। আজকে যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলার।

প্রায় দুই বছর ধরে দেশে ডলার সংকট চলছে। এই সংকট সমাধানে নানা উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সরকারের বিদেশি কেনাকাটার দায়ও পরিশোধ করা হচ্ছে। এর ফলে রিজার্ভে ধারাবাহিক পতন অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে কমতে থাকা রিজার্ভ থেকে আর কোন খাতে বিনিয়োগ করবেন না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, এখন থেকে রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে দেশের অভ্যন্তরে আর ডলার বিনিয়োগ করা হবে না। যেসব খাতে রিজার্ভ বিনিয়োগ করা হয় তাও কমিয়ে আনা হবে। ইতিমধ্যে সাড়ে ৭ বিলিয়নের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) সাড়ে তিন বিলিয়ন করা হয়েছে। পায়রা বন্দরের ঋণ আদায়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে নতুন ডলার আসবে। তখন রিজার্ভ বাড়বে। এজন্য দেশের রিজার্ভ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা বর্তমানে একেবারে তলানিতে এসেছি। আর তো নিচে নামার পথ নেই। আমরা সুড়ঙ্গের কাছ থেকে আলো দেখতে পাচ্ছি। চলতি অর্থবছরে আমরা ঘুরে দাঁড়াব।

এদিকে পতনের ধারা অব্যাহত থাকা রিজার্ভ থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের আকু বিল পরিশোধ করা হবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। এমন পরিস্থিতিতে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স কমছে। জানুয়ারিতে আকু বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ আরও কমতে পারে।

আকু একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দপ্তর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। তবে এখন আকুর সদস্য পদ নেই শ্রীলঙ্কার। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন যাবত আমদানি ব্যয় পরিশোধের বিভিন্ন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির আকু সদস্য পদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।

অর্থসূচক/এমএইচ/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.