গাজায় ইসরাইলের আরও ৪ সেনা নিহত; সিনওয়ারকে হত্যার হুমকি

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান চালাতে যাওয়া ইসরাইলি সেনাদের প্রচণ্ড প্রতিরোধ করছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা। শনিবার নতুন করে তাদের আরো চার সেনার নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে ইসরাইল। অন্যদিকে ইসরাইলের যুদ্ধমন্ত্রী হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছেন।

ইসরাইলি বাহিনী শনিবার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলায় তাদের আরও চার সেনার নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। ইসরাইলি দখলদার বাহিনী এক বিবৃতিতে ওই চার সেনার নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেছে। তারা হচ্ছে- মেজর ইয়েহুদা নাতান কোহেন (২৫), মাস্টার সার্জেন্ট লিওর আরাজি (২৫), স্টাফ সার্জেন্ট নেহেমিয়া নিতজান (২১) এবং স্টাফ সার্জেন্ট ইয়োনাদাভ লিভেনস্টেইন (২৩)।

এই নিয়ে গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজার অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে নিহত ইসরাইলি সেনারা সংখ্যা ২৮ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া, ৭ অক্টোবর ‘আল-আকসা তুফান’ অভিযান শুরুর দিন ৩৬৮ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছিল বলে তেল আবিব স্বীকার করেছে। শনিবার ইসরাইলের নেহাল ব্রিগেডের আরেক সেনা হামাসের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে দখলদার সেনারা।

হামাসের সামরিক বাহিনী ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা তার বাহিনীর ভেরিফায়েড টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানিয়েছেন, শনিবার সারারাত গাজা উপত্যকার উত্তর-পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে দখলদার ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে তাদের প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে হামাসের যোদ্ধারা ইয়াসিন-১০৫ গোলা ব্যবহার করে বহু ইসরাইলি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান ধ্বংস করে নিরাপদে তাদের ঘাঁটিতে ফিরে গেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় তারা আল-ইয়াসিন-১০৫ গোলা ব্যবহার করে ট্যাংক, সাঁজোয়ান যান ও বুলডোজারসহ অন্তত ২৪টি ইসরাইলি যান ধ্বংস করেছেন।

তিনি বলেন, ইসরাইলি বাহিনী তাদের নিহত সেনাদের যে সংখ্যা প্রকাশ করছে তা বাস্তবের তুলনায় খুবই কম। কাসসাম ব্রিগেডের এই মুখপাত্র নিজ জনগণের কাছে সত্য তুলে ধরার জন্য দখলদার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে ইসরাইলের নির্বিচার বোমাবর্ষণে হামাসের হাতে আটক অন্তত ৬০ ইসরাইলি নিহত বা নিখোঁজ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন আবু ওবায়দা। কাসসাম ব্রিগেডের টেলিগ্রাম চ্যানেলে তিনি বলেছেন, ইসরাইলের একটি বিমান হামলার ধ্বংসস্তুপের নীচে ২৩ ইসরাইলি বন্দি চাপা পড়েছে। ইসরাইলি বোমা হামলা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকায় এসব বন্দিদের উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে হামাস হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছিল, ইসরাইলি বিমান হামলা তাদের পণবন্দিদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে।

ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে ব্যাপক হারে ইসরাইলি সেনা মারা পড়লেও তেল আবিব সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করছে না। তবে ফিলিস্তিনিদের হাতে গাজার বিভিন্ন ফ্রন্টে পরাজিত হয়ে ইসরাইলের যুদ্ধমন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্ট। তিনি শনিবার এক বক্তব্যে বলেছেন, হামাসের গাজা প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে ‘খুঁজে বের করে হত্যা’ করা হবে। তিনি শনিবার ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য সেনাদের প্রস্তুতি পরিদর্শনের সময় এ হুমকি দেন।

ইজ্জাদিন কাসসাম ব্রিগেডের সাবেক কমান্ডার ইয়াহিয়া সিনওয়ার বর্তমানে গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতার দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৯ সালে হামাসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়া সংগঠনের রাজনৈতিক দপ্তর প্রধান হিসেবে কাতারের রাজধানী দোহায় চলে গেলে সিনওয়ার গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতায় পরিণত হন।

৬১ বছর বয়সি সিনওয়ারের একক সিদ্ধান্তে গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামাসের অভিযান পরিচালিত হয় বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি কয়েক দফায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ইসরাইলি কারাগারে কাটিয়েছেন। সর্বশেষ দুই ইসরাইলি সেনাকে অপহরণ ও হত্যার দায়ে কারাভোগ করছিলেন সিনওয়ার। তবে ২০১১ সালে এক বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তি পান হামাসের এই সাহসী নেতা। পার্সটুডে

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.