‘পশ্চিমারা চায়-যুদ্ধ টিকে থাকুক কিন্তু ইউক্রেন না জিতুক’

বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ জেলেনস্কির

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দিন যতই গড়াচ্ছে ততই হতাশা বাড়ছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির। পশ্চিমরা যেভাবে উস্কানি দিয়ে, সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে যুদ্ধের মাঠে ঠেলে দিয়েছে, সেভাবে কিছুই ঘটছে না। রাশিয়াকে পরাজিত করা তো দূরের কথা, তাদের কাছে হারানো ভূমি পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন যেন ফিকে হয়ে আসছে। এর পাশাপাশি নতুন উপলব্ধি হচ্ছে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির। তিনি যে আসলে পশ্চিমাদের খেলার পুতুল তা-ই যেন দিন দিন পরিস্কার হয়ে উঠছে।

এমন বাস্তবতায়, জেলেনস্কি মনে করছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলো তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং রাশিয়া খণ্ড বিখণ্ড করার উদ্দেশ্য নিয়ে জেলনস্কিকে মাঠে নামিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে যে একক আধিপত্য কায়েম করেছে, সেটি চিরস্থায়ী করার উদ্দেশ্যেই তারা রাশিয়াকে ভাঙ্গতে চায়। কারণ রাশিয়া তাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুতিনের অভিযোগ যে অনেকাংশে সত্য তা ইতোমধ্যে বেশ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে যুক্তরাষ্ট্র ও তার নেতৃত্বাধীন দেশগুলো ইউক্রেনকে বিপুল সামরিক সহায়তা দিয়েছে। কামান, গোলাবারুদ, ক্ষেপনাস্ত্র, ড্রোন, আকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, জঙ্গী বিমান- কিছুই বাদ যায়নি এ সহায়তা থেকে।

কিন্তু যুদ্ধ শুরুর দিকে ইউক্রেনকে যে উদার সহায়তা করেছে পশ্চিমারা তা ইতোমধ্যে কমে আসতে শুরু করেছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আগ্রাসীভাবে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছে যে পোল্যান্ড, তারা ইতোমধ্যে সব সমায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। চেক রিপাবলিক জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর সহায়তা করবে না। ঘন ঘন অস্ত্র চাওয়া নিয়ে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে বিদ্রুপ করে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, তিনি আমাদেরকে আমাজন ভাবছেন, যেন অর্ডার করলেই অস্ত্র পাওয়া যাবে।

সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমারা যে লেনস্কিকে যথেষ্ট সমর্থন ও মনোযোগ দিতে অস্বীকার করছে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য দিয়েছে টাইম ম্যাগাজিন।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, জেলেনস্কির মিত্ররা মনে করেন, তিনি ‘অবাস্তব চিন্তায়’ মশগুল এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জেতা আসলে অসম্ভব।

গত মাসে ওয়াশিংটন সফরের সময় টাইম ম্যাগাজিনের সঙ্গে কথা বলেন জেলেনস্কি ও তার উপদেষ্টারা। গত ডিসেম্বর মাসে আমেরিকায় তাকে বীরের মতো স্বাগত জানানো হলেও এবার তা হয়নি। এমনকি জেলেনিস্ককে ক্যাপিটল হিলে আইনপ্রণেতাদের সামনে বক্তব্যও দিতে দেয়া হয়নি। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিয়েভকে সমর্থন অব্যাহত রাখতে এখনো বেশ আগ্রহী। কিন্তু রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের কারণে তার এই চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে নতুন বিল পাসের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন এ মুহূর্তে ইউক্রেনকে বাদ রেখে ইসরাইলকে সহায়তা দিতে চলতি সপ্তাহে বিল পাসের কথা বলেছেন।

এ অবস্থায় আমেরিকায় জেলেনস্কির এক সফরসঙ্গীর বরাত দিয়ে টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে, জেলেনস্কি মনে করেন তার পশ্চিমা মিত্ররা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারা ইউক্রেনকে এমনভাবে সহায়তা করছে যাতে যুদ্ধ টিকে থাকে কিন্তু ইউক্রেন বিজয়ী হতে না পারে।

জেলেনস্কি নিজেও টাইমকে বলেন, “সবথেকে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে- গোটা বিশ্ব এখন ইউক্রেন যুদ্ধকে স্বাভাবিক অবস্থা হিসেবে মেনে নিয়েছে। যুদ্ধ নিয়ে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আপনি এটা আমেরিকা ও ইউরোপেও দেখতে পাবেন। তাদের ওপরে ক্লান্তি ভর করেছে মানে এখন এই যুদ্ধ তাদের কাছে একটি ‘শো’তে পরিণত হয়েছে।

পারস টুডে থেকে

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.