বিআইসিএম রিসার্চ সেমিনার অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) রিসার্চ সেমিনার-২৭ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ (২৩ অক্টোবর) ইন্সটিটিউটের মাল্টিপারপাস হলে “Factors Influencing the Individual Investors of Bangladesh to Opt for Investment in Sukuk” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

ইন্সটিটিউটের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার সভাপতিত্ব করেন। উক্ত সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মাদ আনোয়ার হোসেন, মালয়েশিয়ার ইসরা রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের গবেষক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ ও এডিএল অ্যাডভাইজরির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ড. মুফতি ইউসুফ সুলতান।

গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইসলামী শরীয়া পরিপালনকারী ইন্সট্রুমেন্ট খুবই কম রয়েছে। আর্থিক সেক্টরে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকলেও পুঁজিবাজারে স্বল্পসংখ্যক ইন্সট্রুমেন্ট ও মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সুকুক একেবারেই নতুন একটি বিষয়। বিনিয়োগকারীদের মাঝেও বিষয়টি বেশি পরিচিত নয়। পুঁজিবাজার থেকে সুকুক ইস্যু করে তোলা অর্থের মধ্যে বেশিরভাগই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ রয়েছে। এক্ষেত্রে খুচরা বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ খুবই নগন্য, যা ২ শতাংশেরও কম। এক্ষেত্রে সুকুক সম্পর্কে খুচরা বিনিয়োগকারীদের মাঝে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে এবং এ খাতে সম্ভাবনার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের জানা থাকলে খুচরা বিনিয়োগকারীরা (Retail Investors) এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।

এক্ষেত্রে, নতুন এই ইন্সট্রুমেন্ট সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়াও, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য শরীয়াহ অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের  মাধ্যমে অবশ্যই শরীয়াহ সংক্রান্ত বিষয়গুলি যাচাই-বাছাই নিশ্চিত করা জরুরী। এসআরআই (SRI) সুকুক এবং গ্রিন (Green) সুকুকসহ অন্যান্য সুকুক ইস্যু করার সময় প্রতিযোগিতামূলক রিটার্ন (competitive return) এবং ট্যাক্স সুবিধা (tax incentive) বিবেচনা করা জরুরী।

মালায়শিয়াসহ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সুকুকে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিকভাবে অবদান রাখার বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের অনুপ্রাণিত করার জন্য মিডিয়ার মাধ্যমে এ সম্পর্কিত প্রচারের পাশাপাশি প্রেরণামূলক প্রোগ্রামের আয়োজন করা যেতে পারে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে মোহাম্মাদ আনোয়ার হোসেন বলেন, সুকুক এর মত ইন্সট্রুমেন্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদী ফাইন্যান্সিং এর কথা ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে কোন বাধা থাকলে তা দূর করতে হবে। তিনি আরো বলেন, নতুন এই ইন্সট্রুমেন্টটি বিনিয়োগাকারীদের মাঝে পরিচিত করতে হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে খুবই স্বল্পসংখ্যক শরীয়াহ পরিপালনকারী ইন্সট্রুমেন্ট রয়েছে উল্লেখ করে মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুকুক ইস্যুর ক্ষেত্রে খুচরা বাজার (রিটেইল মার্কেট) কে টার্গেট হবে, যদিও এক্ষেত্রে কর্পোরেট গ্রাহকেরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তিনি খুচরা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করতে বিনিয়োগ মূল্য কমানোর ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করেন।

অন্যদিকে ড. মুফতি ইউসুফ সুলতান বলেন, গোটা আর্থিক সেক্টরে কোভিড-১৯ পরবর্তী একপ্রকার স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সুকুকের মতো নতুন ইন্সট্রুমেন্ট হতে পারে বড় অর্থ সংগ্রহের অন্যতম মাধ্যম। এক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগযোগ্য ইন্সট্রুমেন্ট হিসেবে শুধু সচেতনতা সৃষ্টি করাই যথেষ্ট নয়, বরং প্রতিটি স্টেকহোল্ডার এর স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারটিও নিশ্চিত করা দরকার। তিনি আরো বলেন, মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে শুধু শরীয়া পরিপালনকারী ইন্সট্রুমেন্ট  হওয়াটাই যথেষ্ট নয় বরং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা এবং ইন্সট্রুমেন্টটি মৌলিকভাবে শক্তিশালী হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সভাপতির বক্তব্যে ইন্সটিটিউটের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার বলেন, সুকুক সম্পূর্ণরূপে নতুন একটি ইন্সট্রুমেন্ট। এটি সাধারণ বিনিয়োগাকারীদের মধ্যে খুব বেশি পরিচিত নয়। আলোচ্য গবেষণার মাধ্যমে নতুন এই ইন্সট্রুমেন্টটিতে রিটেইল বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে। একইসাথে পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র উন্মুক্ত হবে। পুঁজিবাজারের একটি নতুন ইন্সট্রুমেন্ট হিসেবে সুকুকের উপর প্রশিক্ষণ আয়োজন ও গবেষণার পৃষ্ঠপোষকতায় বিআইসিএম অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রিসার্চ সেমিনারে বিআইসিএমের পরিচালনক (প্রশাসন ও অর্থ) নাজমুছ সালেহীনসহ অনুষদ সদস্যবৃন্দ, কর্মকর্তা এবং অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন।

 

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.