অর্থনীতিতে নোবেল জয় করলেন মার্কিন অধ্যাপক ক্লডিয়া গোল্ডিন। গত ৫৪ বছরের ইতিহাসে চতুর্থ নারী হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেলজয় করলেন ক্লডিয়া। তার আগে এই শাখায় এই পুরস্কার অর্জন করেছেন মাত্র ৩ জন নারী।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে বাংলাদেশে সময় সোমবার এক অনুষ্ঠানে নোবেল কমিটি এই ঘোষণা দেয়। নোবেল কমিটির প্রধান থমাস পার্লম্যান টেলিফোনে এবারের নোবেল বিজয়ীদের এই সুখবর জানান। এই ঘোষণার আগে রসায়নে নোবেলের জন্য মনোনীত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান বা সংক্ষিপ্ত তালিকা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। বরাবরের মতোই সব নথিপত্র অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে রেখে তা জনসাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হয়।
স্টকহোমে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণার অনুষ্ঠানে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের জুরিরা বলেন, নারী শ্রমিকদের বাজার সম্পর্কে সাধারণ লোকজনের জানাশোনা ও বোঝাপড়ার উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক ও গবেষককে চলতি বছর নোবেলের জন্য যোগ্য ব্যক্তি বলে মনে করেছে একাডেমি।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারে নারীদের অবদান খুব একটা উপস্থাপিত হয় না। কাজের ক্ষেত্রেও তারা পুরুষদের তুলনায় কম মজুরি পান। গোল্ডিন এ বিষয়ে ২০০ বছরেরও বেশি সময়ের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে এবং কেন উপার্জন ও কর্মসংস্থানের হারে লিঙ্গ পার্থক্য পরিবর্তিত হয়েছে। সমাজে নারীর অর্থনৈতিক অবদান বিচার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নারীর বিবাহ ও সন্তানধারণ। মূলত এ দুই কারণে অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা পুরুষের চেয়ে কম বলে বিবেচনা করেন অনেকেই। কিন্তু নারীর বিবাহ ও সন্তানধারণের মাধ্যমেও নারীরা কীভাবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখছেন হাজার হাজার বছর ধরে- তা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছেন ক্লডিয়া গোল্ডিন। মূলত এ কারণেই তাকে নোবেলের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
গত বছর অর্থনীতিতে নোবেল জিতেছিলেন তিন মার্কিন নাগরিক। তারা হলেন- বেন এস বারন্যাঙ্কে, ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড, ফিলিপ এইচ ডিবভিগ। ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে গবেষণা করায় এ পুরস্কার দেওয়া হয় তাদের। ২০২১ সালে এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ডেভিড কার্ড, জোশুয়া ডি অ্যাংরিস্ট ও গুইদো ডব্লিউ ইমবেন্স। শ্রম অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ডেভিড কার্ড ও কারণগত সম্পর্ক বিশ্লেষণে পদ্ধতিগত অবদানের জন্য বাকি দুই অর্থনীতিবিদ নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
প্রতি বছর শান্তি, সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা ও অর্থনীতি- এই ৬ বিষয়ে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন; তাদের পুরস্কার প্রদান করে সুইডেনভিত্তিক নোবেল ফাউন্ডেশন। পুরস্কার প্রদানের পর তা উদযাপনে উৎসবের আয়োজন করে নোবেল কমিটি। নোবেল কমিটির সদর দফতর নরওয়েতে।
উনবিংশ শতাব্দিতে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল আবিষ্কার করেছিলেন ডিনামাইট নামের ব্যাপক বিধ্বংসী বিস্ফোরক; যা তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পত্তির মালিক করে তোলে। মৃত্যুর আগে তিনি ৩ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার রেখে গিয়েছিলেন, আজকের বাজারে যা প্রায় ১৮০ কোটি ক্রোনের সমান। আলফ্রেড নোবেলের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের গোড়াপত্তন ঘটে। ১৯৬৮ সালে এই তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.