অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা আবেদ খানের!

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট বাংলাদেশের উপর বড় ধরনের আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে করছেন সিনিয়র সাংবাদিক ও দৈনিক কালবেলার সম্পাদক আবেদ খান। সাংবাদিকতায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ আবেদ খান এর আগে দৈনিক যুগান্তরসহ একাধিক পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকার ঘনিষ্ট এ সাংবাদিকের কূটনৈতিক অঙ্গনেও রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। তাই তার পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণকে অনেক গুরুত্বের সাথে দেখা হয়।

আবেদ খানের মতে, সরকারের কৌশলী ব্যবস্থায় মার্কিন ভিসা নীতি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। আর তাতে মরিয়া হয়ে যুক্তরাষ্ট্র অন্য কৌশল নিতে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট দেশের কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

শনিবার দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত এক কলামে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

কলামে তিনি লিখেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এক বিপজ্জনক অর্থনৈতিক ঘূর্ণিবার্তার ঝাপটা আসার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এই ঝাপটা আসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা অর্থনৈতিক মহল থেকে। এ ব্যাপারে পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক মোড়লরা এখন কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে।

আমার তথ্যসূত্র যদি ভুল বার্তা না দেয়, তাহলে অনুমান করতে পারি দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগ তুলে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে এবং এ বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।’

তিনি আরও লিখেন, ‘সরকারের ওপর একের পর এক চাপের পর এবার এই নতুন পদক্ষেপ। যেহেতু সরকারের কৌশলী ব্যবস্থায় মার্কিন ভিসা নীতি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাই এ পদক্ষেপটি হতে যাচ্ছে ব্যবসায়ী মহলের দিকে তাক করে।

নির্বাচন, গণতন্ত্র এসব নিয়ে সরাসরি কাজ করে ঢাকার আমেরিকান এম্বাসি ও ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাউথ এবং সেন্ট্রাল এশিয়ার শাখা। আর এ দুই জায়গার সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তাদের হিসাব হলো, এখন যদি ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ দেওয়া যায়, তাহলে বাজারে দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে বাধ্য। সাধারণ মানুষ এ নিয়ে সরকারকে দোষারোপ করা শুরু করবে, যার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া হতে পারে আগামী নির্বাচনে।’

আবেদ খানের মতে, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের আরেকটি পদক্ষেপ ঘটতে পারে আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের ব্যাপারে। নভেম্বরে এই দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে দেওয়া হতে পারে এবং সেটা বাংলাদেশের মানবধিকার প্রসঙ্গ তুলে আর রিজার্ভ প্রসঙ্গ ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বিষয়গুলোকে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে।

যারা এই পরিকল্পনার ছক কষেছে, তাদের হিসাব খুবই পরিষ্কার। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যতই নাজুক হতে থাকবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতিও একই সঙ্গে উত্তপ্ত হবে এবং তার আয়োজন সেভাবেই বিন্যাস করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। সরকারের ওপর এখন ত্রিমুখী আক্রমণ হতে যাচ্ছে। এ তৃতীয় মুখটি হচ্ছে গণমাধ্যম। প্রধান বিরোধী দলের মুখপাত্র অতিসম্প্রতি অক্টোবর মাসের দ্বিতীয়ার্ধে সরকার পতনের যে চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করে ফেলেছেন, তা থেকেও এসব পরিকল্পনার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের একাংশ মনে করছে, এরপর আরও একের পর এক এমন সব পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটানো হবে, যা সরকারকে বিচলিত করতে পারে। আর পরিণামে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির একটা চিহ্নিত অংশ নতুন কৌশল অবলম্বন করে আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্তর্ঘাত সৃষ্টি করতে পারে। আর এসবই হতে পারে পশ্চিমা এবং তার দেশীয় অনুচরদের বহুমাত্রিক আক্রমণের বিভিন্নমুখী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। আমার ধারণা, আন্তর্জাতিক চক্রের কয়েকটি নিপুণ পরিকল্পনা হলো :

এক. সরকারকে ক্রমাগত বন্ধুহীন করা

দুই. বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর মধ্যে নানা প্রকার সন্দেহ ঢুকিয়ে দেওয়া

তিন. বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিরূপ মনোভাব উসকে দেওয়া

চার. বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে নানা অপপ্রচারের মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা

পাঁচ. পর্যায়ক্রমে অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার ও ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে অবিশ্বাসের প্রাচীর নির্মাণে নিরন্তর চাপ দিয়ে যাওয়া

ছয়. হুইস্পারিং ক্যাম্পেইন ও ব্যাপক গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি এবং অনিশ্চয়তার বোধ বাড়িয়ে দেওয়া।

আগামী সাত দিনের মধ্যেই এসব প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ সরকার এবং সরকারি দলকে নিরীহ কর্মসূচির বন্ধনীতে আটকে দিলে ফল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষেই চলে যেতে পারে।’

নিজেদের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক হলে বিভিন্ন দেশ ও তার সরকারের উপর, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর অনেক পুরনো একটি কৌশল। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাশিয়া ও ইরানের উপর।

এ ধরণের নিষেধাজ্ঞার ফলে সংশ্লিষ্ট দেশের আমদানি-রপ্তানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। দেশে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। বাড়তে থাকে বেকারত্ব। তাতে জন অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থান কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়লে সেটিকে কাজে লাগাতে চায় তারা।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.