বিদেশি বিনিয়োগ কমায় ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে বড় ঘাটতি

আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম হওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। দেশের চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৩৫৬ কোটি ডলারের। তবে একই মাসে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ১৭৭ কোটি ডলারের ঘাটতি বেড়েছে। বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এ খাতে ঘাটতি বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০১ কোটি ২০ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে যার পরিমাণ ১ হাজার ১১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।

ব্যাংকাররা বলছেন, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট এখনও ঘাটতিতে রয়েছে। বৈদেশিক ঋণ বাড়াতে পারলে এই ঘাটতি পজিটিভ করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়াতে হবে। তবে আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত দেওয়ায় আমদানি কমছে। পাশাপাশি রপ্তানি বাড়ায় আগস্ট শেষে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে।

জুলাই-আগস্ট সময়ে ৯৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৮৮৫ কোটি ডলার। এতে ১০১ কোটি ২০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন অর্থসূচককে বলেন, কারেন্ট একাউন্ট পজিটিভ থাকলেও সার্বিকভাবে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি রয়েছে। সরকারের ঋণের অর্থছাড় কমেছে। একবছর ধরে ট্রেড ক্রেডিটে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা গেছে। এর কারণ হচ্ছে বেসরকারি খাতের যে পরিমাণ রফতানি হচ্ছে, সেই পরিমাণ অর্থ দেশে আসছে না। মুদ্রা বিনিময় হার নীতির কারণেই এটি হয়েছে। কারণ ডলারের দর বেধে দেওয়া হয়েছে। তাই রপ্তানিকারকেরা ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ আনতে দেরি করেন। কারণ প্রতি মাসেই ডলারের দাম বাড়ছে। যত দেরিতে ডলার আনা যায় তত তাদের লাভ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি বাংলাদেশের আউটলুককে নেতিবাচক করেছে। এর প্রভাব বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগে পড়ছে বলে মনে করছেন এই অর্থনীতিবিদ।

আমদানি কমিয়ে চলতি খাতে উদ্বৃত্ত দেখানোকে তিনি উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা চলতি খাতে যে উদ্বৃত্ত দেখছি তার মূল কারণ আমদানি কমে যাওয়া। আলোচ্য সময়ে ২২ দশমিক ৩ শতাংশ আমদানি কমেছে। বাংলাদেশের মত একটা অর্থনীতিতে আমদানি এতটা কমিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা কঠিন হয়ে যাবে। ডলারের সংকট মেটানোর জন্য আমদানির উপর নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে গত এক বছর ধরে। সেদিক থেকে বাণিজ্য ঘাটতি যে পরিমাণ উদ্বৃত্ত হয়েছে এটি কোনো সুখবর না। এটি হচ্ছে না খেয়ে থাকার মতো। অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা নেই, অথচ ব্যাংক ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য আমদানি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমদানি পণ্যের মধ্য কিছু মৌলিক চাহিদা মেটায় আর কিছু আমাদের শিল্প খাতে পণ্য উৎপাদনের কাজে লাগে। শিল্প খাতে আমদানি না হওয়ার কারণে উৎপাদন ও বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। এর ফলে কর্মসংস্থা-মজুরি সহ সবকিছুতে প্রভাব ফেলছে।

এদিকে সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি ১৭ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট শেষে সেবাখাতে দেশ আয় করেছে ১০২ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবাখাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ১৭৭ কোটি ডলার। এতে সেবা খাতের ঘাটতি দাড়িয়েছে ৭৪ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৬৪ কোটি ডলার।

যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। আগস্ট শেষে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত পজিটিভ রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের আগস্ট শেষে এ খাতে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১১১ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ১৪৬ কোটি ডলার।

এদিকে আগস্ট শেষে সামগ্রিক লেনদেন ঘাটতিতে পড়েছে। এ খাতে ১৬৯ কোটি ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিলো ২২২ কোটি ডলার।

তবে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৯৮ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছে বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯৫ কোটি ডলারে উঠেছে।

অর্থসূচক/সুলাইমান/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.