সৌদি বংশোদ্ভূত সাংবাদিক ও কলামিস্ট জামাল খাশগি হত্যার পাঁচ বছর পূর্ণ হলো৷ ন্যায়বিচার তো দূরের কথা, দেশটির ওপর তেমন চাপই তৈরি করতে পারেনি বিশ্ব৷ এ অবস্থায় সৌদি অধিকারকর্মীরা কেমন করে তাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন?
সৌদি রাজতন্ত্রের এই সমালোচককে এদিন তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে হত্যা করা হয়৷ সৌদি অধিকারকর্মীরা এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এখনো লড়াই করে যাচ্ছেন৷ তারা বলছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিময়ে আরেকটু রক্ষণশীল হওয়া প্রয়োজন৷
মার্কিনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ফ্রিডম ইনিশিয়েটিভের সৌদি পরিচালক আবদুল্লাহ আলাউধ বলেন, আমরা জানি, বাস্তবতা হলো, বিশ্বের সরকারগুলোকে সৌদি আরবের সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে, কিন্তু মানবাধিকার বা মৌলিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো দেশ যখন একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচারী সরকারগুলোর সঙ্গে কাজ করে, তখন সেই দেশের নিজস্ব যে কৌশল বা মানবাধিকারের ধারণা, তা ভুলুণ্ঠিত হয়৷ আপনি যখন নিরাপত্তার খাতিরে স্বাধীনতা জলাঞ্জলি দেন, তখন কোনোটাই টেকে না৷
যুক্তরাজ্যভিত্তিক আরেক মানবাধিকার সংগঠন আলকিস্ট ফর হিউম্যান রাইটসের লিনা আল-হাথলুল বলেন, আপনি সৌদি তেল কিনতে পারেন এবং একইসঙ্গে তাদের দেশে হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনাও করতে পারেন৷
আল-হাথলুল তার বোনের জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন৷ তার বোন লুজাইন বহু বছর ধরে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছেন৷ তিনি সৌদি আরবে নারী গাড়িচালকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন৷ তা করতে গিয়ে তাকে তিন বছর জেল খাটতে হয়েছে৷ এখন তিনি জেলের বাইরে থাকলেও সৌদি আরব ত্যাগে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে৷ আর আলাউধের বাবা সালমান এখন ইসলামিক স্কলার৷ তিনি সৌদিতে রাজনৈতিক বন্দি৷ ২০১৭ সালে কাতার ও অন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের পক্ষে একটি টুইট করায় তাকে বন্দি করা হয়৷
এই দুই অধিকারকর্মী খাশগির হত্যকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে৷ এটা সৌদি আরবে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল কেসগুলোর অন্যতম৷ তবে গত কয়েক বছরে এ নিয়ে বিশ্বের মনোযোগ একেবারে কমে গেছে৷
গত এক মাসে সৌদি আরবের খবরগুলোর মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে কেমন করে সবকিছু স্বাভাবিক হতে পারে বা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি, গ্রিসের সঙ্গে বিদ্যুতের গ্রিডের সংযোগ কিংবা সৌদি আরবে মার্কিন ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি প্রতিষ্ঠান লুসিড তাদের প্রথম কারখানা বসাচ্ছে -এগুলোই প্রাধান্য পেয়েছে৷
অথচ পাঁচ বছর আগে এ সময়টাতে খবরের শিরোনামগুলো ছিল ভিন্ন৷ যেমন- ওয়াশিংটন পোস্টের খবর, ‘সিআইএ বলছে খাশগির হত্যার পেছনে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের হাত’৷ অথবা, নিউইয়র্ক টাইমসের খবর ছিল- ‘খাশগি হত্যা: কিভাবে একটি সৌদি নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের গোমর ফাঁস’৷
অধিকার কর্মীরা বলছেন, আপনি হয়তো সৌদি আরবকে আপনার পাশ থেকে হারাতে চান না৷ কিন্তু আসলে ‘আপনি সবাইকে হারাচ্ছেন৷ কারণ, আপনি বিশ্বের কাছে ও প্রত্যেক স্বৈরাচারীর কাছে ভুল সিগনাল দিচ্ছেন যে, আপনি যতক্ষণ তেল সম্পদের ওপর বসে আছেন, আপনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পার পেতে পারেন৷’ সূত্র: ডিডাব্লিউ
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.