ডলার সংকটের সময় প্রবাসী আয়ে বড় ধাক্কা

দেশে প্রায় দুই বছর ধরে চলছে ডলার সংকট। সংকট কাটাতে নানা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সেই উদ্যোগ কোনো কাজে আসছে না। এর মধ্যে আরও শঙ্কা তৈরি করেছে প্রবাসী আয়। সংকটের মধ্যেই সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী  আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। বৃদ্ধি পাওয়ার পরিবর্তে নিম্নমুখী রেমিট্যান্সে ডলার রিজার্ভ পতনে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ধরে যার পরিমাণ ১৪ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪৯০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

আলোচ্য সময়ে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১৮ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫০ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৪৯১ কোটি ৬২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এসেছিলো ৫৬৭ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাসী আয় কমেছে ৭৫ কোটি ৬৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খোলাবাজারে ডলারের দাম বেশি। এর ফলে হুন্ডিতে প্রবাসী আয় বেশি আসছে। তাই বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীদের পাঠানো ডলারের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। রেমিট্যান্স কমার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

একক মাস হিসাবে সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স কমেছে ২৫ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার। সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। এর আগের মাসে অর্থাৎ আগস্টে পাঠিয়েছিলো প্রায় ১৬০ কোটি ডলার। অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।

এছাড়া সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ ডলার। আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছিল। যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।

প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার

সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে (৫ সেপ্টেম্বর) রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৩১৮ কোটি ডলার। এরপর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই ও আগস্ট মাসের আমদানি বিল ১৩১ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। এর ফলে রিজার্ভ প্রবাহও কমতে থাকে।

আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী ঐ মাসের শেষের দিকে (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী এখনো রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলার।

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.