মুনাফার আশায় পরিবেশের ক্ষতি?

২০২০ সালে বিশ্বে প্রায় এক কোটি ইলেকট্রিক যান রাস্তায় ছিল৷ ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় আট কোটি হবে৷ ইলেকট্রিক যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি৷ চিলিতে বিশ্বের অন্যতম বড় লিথিয়ামের ভাণ্ডার আছে৷

কিন্তু লিথিয়াম উৎপাদন করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে৷ তাই চিলির সামনে এখন প্রশ্ন, ই-মোবিলিটির প্রসার বৃদ্ধি থেকে লাভবান হতে কি লিথিয়াম উৎপাদন বাড়ানো হবে, নাকি পরিবেশ রক্ষার দিকে মনোযোগ দেয়া হবে৷ চিলির লিথিয়ামের বেশিরভাগই অন্য দেশে প্রক্রিয়াজাত করা হয়- বিশেষ করে চীনে৷

চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় লিথিয়াম আমদানিকারক- এবং সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারকও৷ এশিয়ার এই দেশটি পরিশোধন শিল্প এবং লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদনে আধিপত্য বিস্তার করছে৷ বিশ্বের মোট লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ৭৯ শতাংশ উৎপাদন করে চীন৷ এরপরে আছে যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড৷

চিলির নিজস্ব উৎপাদন শিল্প গড়ে তোলা কতটা বাস্তবসম্মত, বিশেষ করে যখন তাকে চীনের সিএটিএল কোম্পানির মতো বড় উৎপাদনকারকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে? ব্যাটারি ও সাপ্লাই চেন বিশেষজ্ঞ ক্রিস বেরি বলছেন, ‘তাত্ত্বিকভাবে বললে, চিলিতে আপনি সাপ্লাই চেন গড়ে তুলতেই পারেন৷ ক্যাথোড, অ্যানোড ও ব্যাটারি উৎপাদন করতে পারেন৷ এমনকি ইলেকট্রিক যানও তৈরি করতে পারেন৷ কিন্তু ইলেক্ট্রিক যানের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ইইউ ও চীন, এবং তারাও তাদের নিজস্ব সাপ্লাই চেইন গড়ে তুলছে, তাদের সেই ক্ষমতা আছে৷ ফলে চিলিকে তার উৎপাদিত পণ্য ঐসব বাজারে বিক্রির জন্য প্রতিযোগিতা করতে হবে৷ তাই আমার মনে হয়, নিজস্ব সাপ্লাই চেন গড়ে তোলার বিষয়টা সফল হবে না৷’

তাহলে কি চিলি বড় কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোতে শুধু কাঁচামাল সরবরাহকারী হিসেবে থেকে যাবে, যারা এখন তাদের জলবায়ু লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে চাইছে? যেমন চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ৷

চিলির ইউডিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলডো মাডারিয়াগা বলেন, ‘ডিকার্বনাইজেশন বিষয়ে বিশ্বে একটি বিভাজক রেখা ও দ্বন্দ্ব রয়েছে৷ কারণ গ্লোবাল নর্থ তাদের উচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে ডিকার্বনাইজ করার জন্য গ্লোবাল সাউথকে সম্পদ আহরণে আরও বেশি চেষ্টা করতে বলছে৷ আর গ্লোবাল সাউথ বলছে, ঠিক আছে, এটা আমার জন্য ভালো, কারণ তাহলে আমি আরও বিনিয়োগ পেতে পারি৷ কর্মসংস্থান বাড়াতে পারি৷ রাষ্ট্রীয় সম্পদ আরও বাড়াতে পারি৷’

লিথিয়াম উৎপাদনকে আরও কয়েকটি নতুন অঞ্চলে প্রসারিত করতে চায় চিলি… পরিবেশ রক্ষায় সহায়তার জন্যও আরও কিছু করতে চায়৷ এখন পর্যন্ত সালার ডে আটাকামা এলাকায় লিথিয়াম উত্তোলনের কাজ বেশি হয়েছে৷ সেখানেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লিথিয়াম রয়েছে৷

সোডিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণ ব্রাইন থেকে পণ্য নিষ্কাশনে তুলনামূলকভাবে কম সিওটু নির্গত হয়৷ তবে এতে প্রচুর পানি খরচ হয়৷ তাই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে৷ জলাভূমিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে৷ ইকোসিস্টেম ঝুঁকির মুখে পড়ছে৷

২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ ভূমি ও সামুদ্রিক অঞ্চল রক্ষার অঙ্গীকার করেছে চিলি৷ লিথিয়াম উত্তোলনের নতুন প্রক্রিয়াও খুঁজছে৷ লিথিয়াম বিশেষজ্ঞ জাইমে আলে বলেন, ‘আরও আধুনিক পদ্ধতির সন্ধান করা হচ্ছে৷ যেমন পানির ব্যবহার কমাতে সরাসরি লিথিয়াম উত্তোলন করা এবং খননকাজে স্থানীয়দের আরও বেশি করে যুক্ত করা, যেন তারাও লাভের ভাগ আরও বেশি পেতে পারে৷ যেমন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের৷

সমস্যা হলো, নতুন কৌশলগুলো এখনও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না৷ কখন সেগুলো ব্যবহারের উপযোগী হবে, তা-ও স্পষ্ট নয়৷ কিন্তু একটি বিষয় পরিষ্কার: ই-মোবিলিটির প্রসার বাড়ছে, এবং চিলি এ থেকে আরও লাভের আশা করছে৷ কিন্তু চিলির অগ্রাধিকার কী হবে, তা স্পষ্ট নয় -রাষ্ট্রীয় মুনাফা বাড়ানো নাকি পরিবেশ রক্ষা করা৷ নাকি দুইয়ের মধ্যে একটি ভালো ভারসাম্য খুঁজতে সমর্থ হবে সরকার৷ ডিডাব্লিউ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.