ব্যাংকের উচ্চ পদে নারী নেতৃত্ব কমেছে

চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতের উচ্চ পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ মাত্র ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এ খাতের সর্বোচ্চ পদে ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ নারী নেতৃত্ব ছিল। তবে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার মধ্যম ও সূচনা স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ের পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে নারী কর্মীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৫৬৭ জনে। আগের বছরের একই সময়ে সংখ্যাটি ছিল ৩১ হাজার ৫৪৮। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে ১ হাজারের বেশি নারীর কর্মসংস্থান বেড়েছে। বর্তমানে ব্যাংকে নারী কর্মকর্তার হার ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। ব্যাংকে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবেও নারীদের দেখা যাচ্ছে।

নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও ভালো বেতনকাঠামোর ফলে ব্যাংকের চাকরি বেশ সমাদৃত। ফলে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ব্যাংকে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। এই চাকরি করলে সামাজিক স্বীকৃতিও মেলে। সে জন্য নারীরা ব্যাংকে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। নারীরা শুধু যে ব্যাংকে চাকরিই করছেন, তা নয়, বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে বসে নেতৃত্বও দিচ্ছেন। আবার ব্যাংকের নীতিনির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন অনেক নারী।

ব্যাংকে নারীদের কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় অংশীদার হলো দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বর্তমানে ৩২ হাজার ৫০০ জনেরও কিছু বেশি নারী ব্যাংক খাতে কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ২১ হাজার ৮৭৯ জন কাজ করছেন দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়, যা মোট নারী কর্মকর্তার ৬৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। এছাড়া ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ৭ হাজার ৯৬৪ জন এবং ৯টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৯৭০ জন নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।

পড়ালেখা শেষ করে ব্যাংকগুলোয় প্রচুর নারী কর্মী যোগ দেন। কিন্তু পরে তাঁদের একটা অংশ চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। মূলত কাজের চাপ সামলাতে না পারা ও সন্তান লালন-পালনের জন্য ব্যাংকের চাকরি ছাড়েন তাঁরা। তবে অনেক সময় এমনও হয়ে থাকে, পরিবার কিংবা সমাজ থেকে নেতিবাচক মনোভাবের কারণেও নারী ব্যাংকাররা মাঝপথে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া অনেক পরিবার ঘরের মেয়ে বা বউকে রাত অবধি কাজ করার অনুমতি দিতে চায় না। তখন চাকরি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। সে জন্য উচ্চপর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ যেভাবে এগোনোর কথা ছিল, ঠিক সেভাবে এগোচ্ছে না বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা।

কয়েকটি ব্যাংকের নারী কর্মীরা জানান, দেশের ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র ও যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকলে নারী ব্যাংকারের সংখ্যা আরও বাড়ত। শীর্ষ পর্যায়ের অনেক পদে নারী কর্মকর্তাদের দেখা যেত। পাশাপাশি নারী ব্যাংকারদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের ব্যবস্থা থাকলে নারীরা সহজেই ব্যাংক ছেড়ে যেতেন না। এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু উদ্যোগ নেওয়া জরুরী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে ৩০ বছরের কম বয়সি যেসব কর্মী রয়েছেন তাদের মধ্যে ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ নারী। আর ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সি কর্মীদের মধ্যে নারীর হার ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে এ হার ৯ দশমিক ২২ শতাংশ। আর সূচনা পর্যায়ে নারী কর্মী রয়েছেন ১৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। মধ্যবর্তী পর্যায়ে আছেন ১৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর উচ্চ পর্যায়ে রয়েছেন ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। হিসাবে দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাতে নারীদের অংশগ্রহণ প্রারম্ভিক পর্যায়ে বেশি।

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

মন্তব্য
Loading...