ডলার ব্যয়ের স্বপ্ন ঘাম ঝরায়, তবুও বিদেশে বাড়ছে কার্ডের লেনদেন

দেশে ডলার সংকট আবার চরমে উঠেছে। দেশের বাইরে পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেককে। আর ঘুরতে যেতে ডলার ব্যয়ের স্বপ্নে এখন ঘাম ঝরে। কারণ অনেক ব্যাংক বলে ডলার নেই, আবার অন্য উপায়ে বেশি দামে ডলার দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয় নানা উপায়ে।

ব্যাংকে ডলার না পেয়ে গ্রাহকদের দ্রুতগতিতে ছুটে যেতে হয় খোলা বাজারে। সেখানে ডলার প্রতি দাম শুনে চোখ বড় হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। খোলা বাজারে প্রতি ডলার কিনতে ব্যয় করতে হচ্ছে ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। দেশের মধ্যে ডলারের এত সংকট থাকার পরেও কার্ডে দেশের বাইরে জুলাইয়ে লেনদেন হয়েছে ৫১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর আগের মাসে যার পরিমাণ ছিল ৩৮৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক মাসের মধ্যে বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের লেনদেন বেড়েছে ১২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশের বাইরে বাংলাদেশিরা ভিসা কার্ডে লেনদেন করেছেন ৪০৪ কোটি ডলার। জুনে লেনদেন হয়েছিলো ৩০৩ কোটি ডলার। এক মাসের ব্যবধানে ভিসা কার্ডে ১০১ কোটি ডলারের লেনদেন বেড়েছে। জুলাইয়ে মাস্টার কার্ডে ৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলার, অ্যামেক্স কার্ডে ৩৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার এবং ইউনিয়ন-পে কার্ডে ২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার লেনদেন হয়।

চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন মজুমদার অর্থসূচককে বলেন, জুলাইয়ে দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে ডলারের লেনদেন বাড়ার পেছেনে তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত চলতি বছরের হজ কার্যক্রমের একটা বড় অংশ জুলাই মাসে সম্পন্ন হয়েছে। এই সময়ে হাজীদের ডলারে প্রচুর খরচ হয়েছে।

এরপরে নগদ ডলারের সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আলোচ্য সময়টাতে নগদ ডলারের সংকট ছিল। যার কারণে বিদেশগামী মানুষ বাধ্য হয়ে কার্ডে ডলার নিয়ে গেছেন। এরফলে কার্ডে ডলারের খরচ বেড়েছে। এছাড়া জুলাই মাসে উচ্চশিক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীরা বিদেশে যান। এসব শিক্ষার্থীরাও কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ করেন। এসব কারণেই তখন দেশের বাইরে কার্ডের মাধ্যমে ডলারের খরচ বেড়েছে বলে তিনি মনে করছেন।

এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে কার্ড ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করেছেন ৬ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে তা ছিল ২ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিদেশে গিয়ে কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার খরচের প্রবণতা বেড়েছিল ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

সমাপ্ত অর্থবছরে লেনদেনের পরিমাণের সঙ্গে এর সংখ্যাও বেড়েছিল। পুরো অর্থবছরে মোট লেনদেন হয়েছিলো ৯২ লাখ ৩৭ হাজার। এর আগের অর্থবছরে লেনদেনের সংখ্যা ছিল ৫৬ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরে লেনদেনের সংখ্যা বেড়েছে ৩৫ লাখ ৪৭ হাজার। বিদেশে গিয়ে একজন বাংলাদেশি সাধারণত এক বছরে ১২ হাজার ডলার বা এর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে পারেন। নগদ বৈদেশিক মুদ্রা কিংবা কার্ড ব্যবহার করে এই পরিমাণ অর্থ খরচের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বর্তমানে বাংলাদেশিরা ব্যবসা-বাণিজ্য সহ অনেক কাজে দেশের বাইরে যাতায়াত করেন। বিশ্বের মধ্যে ভারতে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেন তারা। চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রতিবেশী এই দেশটিতে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন ৮৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা মোট খরচের ১৭ শতাংশ। খরচের তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশটিতে খরচ করা হয়েছে ৭০ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ব্যয়ের ১৪ শতাংশ।

এছাড়াও জুলাই মাসে বাংলাদেশিরা কার্ডের মাধ্যমে সৌদিতে ব্যয় করেছেন ৫৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার, থাইল্যান্ডে ৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার, সিঙ্গাপুরে ৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যুক্তরাজ্যে ৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার, দুবাইতে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে ১৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশিরা সুপারশপে কেনাকাটায় বৈদেশিক মুদ্রার খরচ করেন সবচেয়ে বেশি। জুলাই মাসে সুপারশপে ব্যয় হয়েছে ১৫৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। খুচরা আউটলেট সেবায় ব্যয় হয়েছে ৮০ কোটি ডলার। লেনদেনের অন্যান্য ধরনের মধ্যে আছে ওষুধ ও কাপড় কেনাকাটা। এই দুই খাতে ব্যয় করা হয়েছে ১০৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। মূলত উড়োজাহাজ, ট্রেন ও বাসে ভ্রমণ কিংবা উবারের মতো সেবা ব্যবহারের বিপরীতে এই খরচ হয়ে থাকে।

অর্থসূচক/সুলাইমান/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.