পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এসএস স্টিলের চেয়ারম্যান জাভেদ অপগেনহাফেনের সাড়া জাগানো বিয়ে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে কোম্পানিটি। প্রতিবাদলিপিতে জাভেদ অপগেনহাফেনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সম্প্রতি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অতি জৌলুসপূর্ণ যে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে, ওই অনুষ্ঠানের সব ব্যয় বহন করেছেন তার স্ত্রী রোজেমিন মাধবজি।
তবে ওই অনুষ্ঠানে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। রোজেমিন যে অনুষ্ঠানমালার ব্যয় বহন করেছেন, তার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণাদিও উপস্থাপন করেনি কোম্পানিটি।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) অর্থসূচকে রুগ্ন কোম্পানির কর্ণধারের শত কোটি টাকার বিয়ে শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটি পুঁজিবাজারে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
মধ্যপ্রাচ্যের ফ্যাশন ম্যাগাজিন হারপারসবাজারে প্রকাশিত এক সংবাদের বরাত দিয়ে অর্থসূচক আলোচিত সংবাদটি পরিবেশ করে। তাতে যুক্ত করা হয় অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া কিছু তথ্য। সূত্র অনুসারে, জাভেদ অপগেনহাফেনের স্ত্রী রোজেমিন মাধবজি দুবাইয়ের একজন প্রভাবশালী কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও উদ্যোক্তা। গত ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর প্যারিসের খুবই ব্যয়বহুল দুটি ভেন্যুতে বিয়ের প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৬শ অতিথি অংশ নেন। ব্যয়বহুল ভেন্যু, অনুষ্ঠানের জৌলুস ও পরিসরের নিরিখে মনে করা হচ্ছে এ বিয়েতে শত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
জাভেদ অপগেনহাফেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এসএস স্টিলের চেয়ারম্যান এবং ফুওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়া সম্প্রতি ওইম্যাক্স ইলেকট্রোড নামে তালিকাভুক্ত আরও একটি কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছেন তিনি। এসব কোম্পানির পারফরম্যান্স তেমন সন্তুষজনক নয়।শেয়ারহোল্ডারদেরকে ১/২ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেয় না এসব কোম্পানি। কোম্পানিগুলো রুগ্ন হলেও এগুলোর কর্ণধারের বিয়েতে হয়েছে বিপুল ব্যয়। এই বিপুল অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হয়েছে, নেওয়া হয়েছে দেশের বাইরে-তা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। এগুলো ছিল রিপোর্টের প্রতিপাদ্য বিষয়। এর প্রেক্ষিতে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে এসএস স্টিল।
এসএস স্টিলের প্রতিবাদলিপির পুরো অংশ-
বিয়ে এবং ব্যক্তিগত বিষয়: জাভেদ অপগেনহাফেন প্রথমত উল্লেখ করেন যে বিয়ে মানুষের একটি ব্যক্তিগত বিষয় এবং এ বিষয়ে সাথে কোম্পানির নাম জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করার অর্থ হলো এখানে কোম্পানির সুনাম নষ্ট করা ও ব্যক্তিগত ভাবে তার মান সম্মান নষ্ট করা তাদের মূল উদ্দেশ্য। সুতরাং, এই সংবাদ উদ্দেশ্য প্রণোদিত তার মালিকানাধিন কোম্পানি গুলোর সুনাম নষ্ট ও কোম্পানির কর্ণধার জাভেদ অপগেনহাফেন এর সম্মান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়েছে বলে ব্যবসায়ী জাভেদ অপগেনহাফেন দাবি করেছেন।
প্রতিবাদ এবং নিয়ন্ত্রণ: জাভেদ অপগেনহাফেন বর্তমানে তিনটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি পরিচালনা করছেন এবং এই কোম্পানির তদারক ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, বিএসইসি (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যখন কোন বিষয় নিয়ে আমাদেরকে তথ্য জানতে চাওয়া হলে আমরা যথা সময়ে উত্তর জমা দিয়ে থাকি কারণ আমরা রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের অনুগত।

মিথ্যা তথ্য এবং অভিযোগ: জাভেদ অফগ্যানহাফেন সংবাদে উল্লেখ করেন যে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে উদ্যোক্তা জনাব জাবেদ প্লেসমেন্ট শেয়ারের ১ কোটি ৮০ লক্ষ শেয়ার আত্মসাতকরার অভিযোগ উঠেছিল এবং তাহা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি দীর্ঘদিন শেয়ার ফ্রিজ করে দেয় । জাভেদ অফগ্যানহাফেন দাবি করেন যে এই অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এবং উক্ত শেয়ারগুলো ফ্রি করে কোম্পানির প্রকাশিত প্রোসপেক্টাস অনুযায়ী বরাদ্দ দিয়েছে, যেটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে উত্তর দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে প্রতীয়মান হয় যে প্রকাশিত সংবাদটি একটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত কোম্পানির সুনাম নষ্ট ও কোম্পানির কর্ণধার জাবেদ এর ব্যক্তিগত সম্মান নষ্ট করার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে কারণ উক্ত অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে ও উক্ত শেয়ারগুলো ফ্রি করে কোম্পানির প্রকাশিত প্রসপেক্টাস অনুযায়ী বরাদ্দ দিয়েছে । এই অভিযোগটি একটি কুচক্র মহল কোম্পানির সুনাম ও কোম্পানির কর্ণধার জনক জাবেদ অফগ্যানহাফেন এর সম্মান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে করেছিল ।
সংবাদে যে বিয়ের ব্যয় উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কাল্পনিক, এবং এ ব্যয় বহন সংক্রান্ত বিষয়ে কোন সঠিক তথ্য না নিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। বলা বাহুল্য যে বিয়ের সকল ব্যয় জাভেদ অফগ্যানহাফেনের স্ত্রী রোজেমিন মাধবজি বহন করেছে । আমরা এই সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ করছি ।
সুতরাং, উল্লিখিত সংবাদের প্রকাশ প্রাকৃতিক ভাবে অসত্য এবং কোম্পানির সুনাম এবং কর্ণধার জাভেদ অপগেনহাফেনের সম্মান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।
আমাদের ব্যাখ্যা:
অর্থসূচকের সংবাদের প্রেক্ষিতে এসএস স্টিলের পক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করা বক্তব্যে আমাদের ব্যাখ্যা রয়েছে। তিনি বিয়েকে ব্যক্তিগত বিষয় উল্লেখ করে তার সাথে কোম্পানির নাম জড়িয়ে রিপোার্ট করাকে উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। বিয়ে অবশ্যই ব্যক্তিগত বিষয়। কোনো ব্যক্তি একটি কেন, ১০টি বিয়ে করলেও হয়তো অর্থসূচক তা নিয়ে রিপোর্ট করতো না। কিন্তু কোনো কোম্পানির কর্ণধাররা যখন শেয়ারহোল্ডারদেরকে উল্লেখযোগ্য কোনো লভ্যাংশ না দিতে পারলেও বিয়ের মত অনুষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন, তখন বিষয়টি সংবাদে পরিণত হয়।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, রুগ্ন কোম্পানির উদ্যোক্তার এত অর্থবিত্ত আসে কোথা থেকে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া ১২ হাজার ডলারের বেশি অর্থ দেশের বাইরে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যয়িত অর্থের উৎস কী।
পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী এবং দেশের স্বার্থেই গণমাধ্যম এ ধরনের বিষয় সবার কাছে তুলে ধরে, যাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে তা খতিয়ে দেখতে পারেন। এমন তাগিদ থেকেই অর্থসূচক রিপোর্টটি করেছে। এই রিপোর্টের পেছনে জাভেদ অপগেনহাফেন বা তার মালিকানাধীন কোনো কোম্পানির সুনাম নষ্ট করা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।
এসএস স্টিলের পাঠানো পুরো প্রতিবাদলিপি হুবহু প্রকাশ করছে অর্থসূচক। এতে দাবি করা হয়েছে, জাভেদ অপগেনহাফেনের স্ত্রী রোজেমিন মাধবজি ওই বিয়ের অনুষ্ঠানের ব্যয় বহন করেছেন।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.