ব্যাংকের মামলা খাওয়া কৃষকরাই বাড়াচ্ছেন আমানত

দেশের অর্থনীতিতে অনেক বেশি অবদান রাখছে কৃষি খাত। লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কৃষকদের পড়তে হয় মামলার ফাঁদে। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়েও অনেকে থাকেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবে ব্যাংক খাতের বঞ্চিত কৃষক গ্রাহকেরাই বাড়চ্ছেন আমানতের পরিমাণ। জুন প্রান্তিক শেষে কৃষকদের হিসাবে আমানত দাঁড়িয়েছে ৬৫৭ কোটি টাকা, যা এর আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকে কৃষকদের হিসাব দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ৮৩৭টি। যা এর আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি। এসময় কৃষকদের ১০ টাকার হিসাবে আমানত জমা পড়েছে ৬৫৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা মার্চ প্রান্তিকের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। এছাড়া ২০২২ সালের একই সময়ের চেয়ে জুন প্রান্তিকে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি আমনত জমা পড়েছে।

কৃষকদের মধ্যে সবাই দরিদ্র। অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে টাকা শোধ করেন, আবার অনেকে এই অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হন। এসব অর্থ ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে হরহামেশাই মামলা জালে আটকা পড়ে দেশের কৃষকেরা। ঋণের দায়ে গ্রেপ্তারি পরোয়না জারি হওয়া বাড়িছাড়া হন অনেক কৃষক। গ্রেপ্তার হওয়া কৃষকদের জামিন করাতে আদালত পাড়ায় স্বজনদের দীর্ঘদিন ঘুরতে হয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কৃষকদের জন্য ঋণ আরও সহজলভ্য করা দরকার বলে মনে করছেন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি অর্থসূচককে বলেন, অনেক সময় হাজার কোটি টাকার খেলাপিরাও আইনের সহয়তা নিয়ে সুযোগ তৈরি করে নেয়। বর্তমানে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, এটা যদিও অফিশিয়াল পরিমাণ। খেলাপি ঋণ প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা হবে। এসবের মধ্যে আমাদের কৃষকরা কিন্ত নেই। যারা খেলাপির মধ্যে রয়েছে তারা ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে। কৃষকদের জন্য ঋণ আরও সহজলভ্য এবং জামানত ছাড়াই ঋণ দেওয়া যেতে পারে। আমি মনে করি, যারা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা তারা এদিকে নজর দিতে পারেন।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংকখাতে গ্রাহকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। যা আগের মাস মে শেষে ছিল ১৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এই খাতে আমানত বেড়েছিলো ৩১ হাজার কোটি টাকা।

কৃষি খাত উন্নয়নে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। স্বল্প সুদে এই খাতের গ্রাহকদের নানা ঋণ সুবিধা তৈরি করে দিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করে দেওয়া হয়। তবে দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে কৃষি খাতের ঋণ বিতরণে অনীহা দেখা যায়। সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি খাতে ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। বেশিরভাগ ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিতরণ করলেও সরকারি-বেসরকারি আটটি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।

অধিকাংশ কৃষকদের পরিবারের দাবি, কৃষকদের সবাই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। অনেকেই প্রতিদিন শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। আবার কেউবা ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা মামলার বিষয়ে কিছুই জানতে পারেন না। হঠাৎ করেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরে তারা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন।

দেশের অর্থনীতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষি খাতের অবদান প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। এমন বাস্তবতায় কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে প্রতিবছর কৃষি ও পল্লীঋণ নামে নীতিমালা প্রণয়ন করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালার আওতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য পৃথক পৃথক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নও তদারকি করা হয়।

অর্থসূচক/সুলাইমান/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.