স্বল্প জামানতে বড় ঋণ দিয়ে বিপাকে জনতা ব্যাংক

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রামের সাধারণ বীমা শাখায় স্বল্প জামানতে একটি প্রতিষ্ঠানক ১ হাজার ২৪৮ কোটি ২৬ লক্ষ টাকার ঋণ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই ঋণের বিপরীতে জামানত রাখা হয়েছে মাত্র ৬১১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বড় অঙ্কের এই ঋণ আদায় করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে ব্যাংকটি।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জনতা ব্যাংকের ৬০৩ তম সভায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অনুকূলে বিভিন্ন দেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য ৬৫০ কোটি টাকার ঋণপত্র অনুমোদন করা হয়। এরমধ্যে আমদানি ঋণপত্রের বিপরীতে ৩২ কোটি টাকা ও জমি বন্ধকে ৪০০ কোটি টাকার ঋণসীমা অনুমোদন করা হয়েছিলো। তবে শর্ত ছিলো ঋণের মোট লিমিট কোনভাবেই ৬৫০ কোটি টাকার বেশি হবে না। নিয়মের তোয়াক্কা না করে অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পরে শাখাটি।

এবিষয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল জব্বার অর্থসূচককে বলেন, এই ঘটনাটি ২০২০ সালের। তাই আমি এবিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। বিষয়টি সম্পর্কে আমাকে বিস্তারিত জানতে হবে।

ব্যাংকটির ঋণ অনুমোদনের সময় বলা হয়েছিলো, লোকাল এলসি খাতে মোট লিমিটের ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা যাবে। অর্থাৎ এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডস্ট্রিজকে ৩২৫ টাকার এলসি সুবিধা দেওয়া যেতো।

তবে চট্টগ্রামের সাধারণ বীমা ভবনের কর্পোরেট শাখায় শর্ত ভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠানটির জন্য ৮১৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকার এলসি খোলা হয়। এলসি খোলার পরে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ আদায় না করে পিএডি দায় সৃষ্টি করা হয়। এসব কাজে শাখা থেকে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

অথচ জনতা ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, পিএডি দায় ১০ কোটি টাকার বেশি হলে ব্যাংকের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়া এই ধরনের ঋণ ২০ কোটি টাকা ছাড়ালে পর্ষদের অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়। তবে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডস্ট্রিজের কাছ থেকে ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হলেও কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে রাষ্ট্রমালিকানধীন এই ব্যাংকটি।

অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটির তিন খাতে ৬৫০ কোটি ৯ লাখ টাকা ঋণ থাকার পরেও অতিরিক্ত আরও ৪২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গ্রাহককে সিসি থেকে অনিয়মিতভাবে ৪টি চেকের মাধ্যমে ১৭০ কোটি টাকা উঠিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেয় ব্যাংকের ঐ শাখা।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, দেশের ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা না থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নিয়ম মেনে ঋণ না দেওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকটির অনেক বেশি ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এসব ব্যাংককে নানা সুবিধা দিয়ে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। এ জন্য অনেকেই ইচ্ছা করে ঋণ শোধ করছে না।

তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি ছাড়াই ডকুমেন্টস রেখে ঋণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সীমাতিরিক্ত লোকাল এলসি খোলা হয়েছে। এছাড়া জমি বন্ধকীর ঋণ সুবিধার লিমিট পার হওয়ার পরেও অনিয়মিতভাবে এই খাত থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এরফলে ব্যাংকের ঐ শাখায় গুরুতর অনিয়ম হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে জনতা ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। আর এসময় খেলাপির ঋণের পরিমাণ ২৮ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট ঋণের ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে।

অর্থসূচক/সুলাইমান/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.