বাংলাদেশের বিদায়

কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার ২৫৭ রানের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাইম শেখ। শুরু থেকেই ব্যাট হাতে সাবলীল ছিলেন মিরাজ। মাহিশ থিকশানার এক ওভারে দুটি চার মেরেছেন মিরাজ। শুরুতে স্বাচ্ছন্দ্য পেতে বেগ পেতে হয়েছে নাইমকে। যদিও তাওহীদ হৃদয় ছাড়া বাকি ব্যাটাররা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। ফলে ৮২ রানের ইনিংসের পরও ২১ রানে হেরে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিলো বাংলাদেশ।

যদিও পাওয়ার প্লেতে এই দুজন কোনো বিপদ হতে দেননি ১০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ৪৭। ইনিংসের ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে চার মেরে জুটির হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন মিরাজ। এরপর তাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি দাসুন শানাকা। লঙ্কান অধিনায়কের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন মিরাজ। তবে তা সোজা চলে যায় মিড উইকেটে ফিল্ডিং করা দুশান্থ হেমান্থের হাতে।

ফলে দলীয় ৫৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় টাইগাররা। এরপর নাইমও টিকতে পারেননি। তিনি ২১ রান করে শানাকার বলে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। তৃতীয় উইকেটে লিটন দাসকে সঙ্গ দিতে আসেন সাকিব আল হাসান। তাকে থিতু হতে দেননি মাথিশা পাথিরানা। এই লঙ্কান পেসারের রাউন্ড দ্য উইকেটে করা বেরিয়ে যাওয়া বলে কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হয়েছেন সাকিব। যদিও লঙ্কান ফিল্ডারদের আবেদন নাকচ করে দিয়েছিলেন মাঠের আম্পায়ার।

তারা রিভিউ নিলে দেখা যায় বল সাকিবের ব্যাট স্পর্শ করেছে। যা ধরা পড়েছে স্নিকোমিটারেও। ফলে সাজঘরের পথ ধরেন সাকিব। দুনিথ ওয়েলালাগের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ১৫ রান করা লিটন দাসও। অফ স্টাম্পের বাইরে ঝুঁলিয়ে বল করেছিলেন ওয়েলালাগে। লিটন চেয়েছিলেন ড্রাইভ করতে। তবে ঠিক মতো ব্যাটে বলে করতে পারেননি। বল ব্যাটের কানায় গেলে মেন্ডিসের গ্লাভসে চলে যায়।

শুরুতে ধরতে না পারলেও দুইবারের চেষ্টায় ক্যাচ নিতে পেরেছেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের হাল ধরেন তাওহীদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম। এই দুজনের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশের সংগ্রহ একশো ছাড়িয়ে যায়। হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তবে তাদের জমে উঠা জুটি ভাঙেন দাসুন শানাকা।

ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসারের বলে জায়গা বানিয়ে মিড অফের উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন মুশফিক। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক করতে না পারায় কাসুন রাজিথার হাতে ধরা পড়তে হয় তাকে। বাংলাদেশের এই উইকেটকিপার ব্যাটার ফিরেছেন ২৯ রান করে। মুশফিক ফেরার পর হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন হৃদয়। শানাকার লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে চার মেরে ৭৩ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন তরুণ এই ব্যাটার।

শামীম হোসেনকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি থিকশানা। ডানহাতি এই স্পিনারের বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়ে সাজঘরে ফেরেন ৫ রান করা এই ব্যাটার। রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি শামীমের। বাঁহাতি এই ব্যাটার ফেরার পর একাই লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন হৃদয়। তবে তরুণ এই ব্যাটারকে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় শ্রীলঙ্কা।

থিকশানার বলের লাইন মিস করে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন হৃদয়। আশার আলো হয়ে থাকা এই ব্যাটার রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। বাংলাদেশের হয়ে এদিন একাই লড়াই করা হৃদয় আউট হয়েছেন ৮২ রানের ইনিংস খেলে। থিকশানা ফিরিয়েছেন তাসকিন আহমেদকেও। শেষ দিকে নাসুম আহমেদের ১৫ ও হাসান মাহমুদের ১০ রান কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছে।

এর আগে টসে জিতে বোলিংয়ে নেমে বাংলাদেশের বোলাররা দারুণ বোলিং করলেও উইকেট পাচ্ছিলেন না। অবশেষে সেই আক্ষেপ ঘুচান হাসান। তার করা লেংথ ডেলিভারিতে আউটসাইড এজ হয়ে উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ১৮ রান করা দিমুথ করুনারত্নে।

এরপর লম্বা সময় উইকেটের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় বেশ কয়েকবার সুযোগ হাতছাড়া করেছে টাইগাররা। ব্যক্তিগত ৩৬ রানে হাসান মাহমুদের বলে পাথুম নিশাঙ্কার ক্যাচ ফেলেছেন মুশফিকুর রহিম। এরপর শরিফুলের শর্ট লেংথের বলে পুল করেছিলেন মেন্ডিস, স্কয়ার লেগে থাকা শামীমের হাত গলে বেরিয়ে সেটি ছক্কা হয়ে যায়। একটু পেছনে থাকলে এই ক্যাচ শামীম নিতে পারতেন অনায়াসে। ফলে ২৯ রানে জীবন পেয়ে যান মেন্ডিস।

অবশ্য এর খানিক বাদেই নিশাঙ্কা ও মেন্ডিস মিলে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ একশো পার করেন। তাদের জুটি ভেঙেছেন টাইগার পেসার শরিফুল ইসলাম। এই টাইগার পেসার তার ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ করে আউট করেছেন ৬০ বলে ৪০ রান করা নিশাঙ্কাকাকে। এর ফলে মেন্ডিসের সঙ্গে তার দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙে ৭৪ রানে।

৭২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন মেন্ডিস। এরপরই ধৈর্য্য হারিয়েছেন লঙ্কান এই ব্যাটার। শরিফুলের করা বাউন্স বলে আপার কাট করেছিলেন মেন্ডিস। তবে ব্যাটে বলে করতে না পারলে বল চলে যায় সোজা থার্ড ম্যান অঞ্চলে থাকা তাসকিন আহমেদের হাতে। তিনি জায়গায় দাঁড়িয়ে সহজ ক্যাচ নিয়েছেন।

চারিথা আসালাঙ্কাকে বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি তাসকিন। এই টাইগার পেসারের করা স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে টপ এজ করেছেন আর লং অফ থেকে দৌড়ে গিয়ে সেই ক্যাচ লুফে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। আসালাঙ্কার ইনিংস শেষ হয়েছে ব্যক্তিগত ১০ রানে। এর ফলে সাদিরা সামারাবিক্রমার সঙ্গে তার জুটি বড় হতে দিলেন না তাসকিন।

খানিক বাদে হাসান মাহমুদের করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ৬ রান করা এই ব্যাটারকে ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কার চাপ বাড়িয়েছেন টাইগার পেসার হাসান। যদিও এরপর শ্রীলঙ্কার রান বাড়িয়েছেন সাদিরা সামারাবিক্রমা ও দাসুন শানাকা।

এই জুটি গড়ার পথেই ৪২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সামারাবিক্রমা। দুজনে মাত্র ৪৭ বলে জুটির হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। ৩১ বলে ২১ রান করা শানাকা বোল্ড হয়েছেন হাসানের বলে স্কুপ খেলতে গিয়ে। এর ফলে শেষ হয় সামারাবিক্রমা ও শানাকার ৬০ রানের জুটি। শেষদিকে দুনিথ ওয়েলালাগেকে রান আউট করেছেন হাসান। ইনিংসের শেষ ওভারে মাহিশ থিকশানাকে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়েছেন তাসকিন।

দারুণ খেলতে থাকা সামারাবিক্রমাকে সেঞ্চুরি পেতে দেননি তাসকিন। শেষ ওভারে চার বল খেলার সুযোগ পেলেও তাকে ১০ রান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাকে। তাসকিনের করা ইনিংসের শেষ বলে ওয়াইড লং অন দিয়ে তুলে মেরেছিলেন সামারাবিক্রমা। যদিও জুতসই শট না হওয়ায় ধরা পড়েন আফিফ হোসেনের হাতে। আর তাতেই সামারাবিক্রমার ইনিংসের সঙ্গে শেষ হয় শ্রীলঙ্কার লড়াই।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.