বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বাইরের হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়: ল্যাভরভ

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপের মধ্যেও বাংলাদেশ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বজায় রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের বন্ধুরা বাংলাদেশের ওপর শক্তি প্রয়োগের যে চেষ্টা করছে, যা ঠিক নয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে যৌথ ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন ল্যাভরভ।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপের পরও রাশিয়া ইস্যুতে পররাষ্ট্র নীতিতে অটল থাকায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-রাশিয়া একসঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করবে এবং পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করবে।

সামনের দিনে ঢাকা-মস্কোর সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ল্যাভরভ।

ল্যাভরভ বলেন, বাংলাদেশে এটা আমার প্রথম সফর। বাংলাদেশ আমাদের অনেক পুরনো বন্ধু। আমাদের বাণিজ্য সুবিধা বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরেই বাংলাদেশ আমাদের দ্বিতীয় বাণিজ্য অংশীদার। আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এর মধ্যে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। যা সামনে তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের বন্ধুরা অকাস এবং কোয়াড গঠনের মাধ্যমে অনেক তৎপরতা চালাচ্ছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে রাশিয়া। আমরা যদি পরিস্থিতি বিবেচনা করি, তাহলে দেখতে পাই তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) লক্ষ্য চীনকে প্রতিহত ও রাশিয়াকে একঘরে করে ফেলা। যা কার্যত ন্যাটোর সম্প্রসারণেরই অংশ।

তিনি বলেন, ইন্দো প্যাসিফিকের নামে এ অঞ্চলে রাশিয়াকে একাকী করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। অকাস এবং কোয়াড গঠনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ব্লক রাজনীতির চর্চা করছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ল্যাভরভ বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে রাশিয়া জাতিসংঘসহ নানা প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করছি, যা অব্যাহত থাকবে। এ ইস্যুতে পশ্চিমারা মিয়ানমারকে চাপ দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রর কাজ যথা সময়ে শেষ হবে বলে জানান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ কথা সময়ে শেষ হবে। এ প্রকল্পের জ্বালানি আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশে আসবে। আমরা দুপক্ষ গ্যাস ক্ষেত্র প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছি, এলএনজি সরবরাহ কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেটা নিয়েও আমরা চেষ্টা করছি।

রূপপুরের মালমাল নিয়ে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়া প্রসঙ্গে ল্যাভরভ বলেন, আমাদের আলোচনায় বিষয়টি স্থান পেয়েছে। জাহাজ ফিরিয়ে দেওয়াতে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প উন্নয়নে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এ ইস্যুর সহজ সমাধানের চেষ্টা করছি। রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে গম ও সার আমদানি সহজ করার বিষয়ে উভয়পক্ষ কাজ করছে বলেও জানান ল্যাভরভ।

প্রায় ২৪ ঘণ্টার সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই প্রথম কোনো রুশ পরররাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রথম ঢাকা সফর এটি।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.