গ্রিন কার্ড পাওয়ার আগেই মারা যাবে ৪ লাখ ভারতীয়!

বিশ্বের অনেক দেশের মানুষের মত ভারতীয়দের কাছেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা আমেরিকা এক স্বপ্নের দেশ। দেশটিতে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের ভিড় বেড়েই চলেছে। তাদের সবারই প্রধান স্বপ্ন-গ্রিন কার্ড পাওয়া। এই কার্ড দেবে দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করা ও সব নাগরিক সুবিধা পাওয়ার নিশ্চয়তা।

কিন্তু ওই গ্রিন কার্ড প্রদান প্রক্রিয়ায় আছে বেশ দীর্ঘসূত্রিতা। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর এই প্রক্রিয়া শেষ করার গতি আরও শ্লথ হয়েছে। বর্তমানে যে গতিতে প্রক্রিয়াটি শেষ হয়, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে অপেক্ষমান মানুষের গ্রিন কার্ড প্রাপ্তিতে লাগতে পারে ১৩৪ বছর। আর এর মধ্যে অপেক্ষায় থাকা প্রায় ৪ লাখ ভারতীয় এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমাবেন। মরার আগে নিজের গ্রিন কার্ডটি ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য তাদের হবে না।

এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর জানিয়েছে।

খবর অনুসারে,  আমেরিকায় পাকাপাকি ভাবে বসবাস করার ছাড়পত্র বা গ্রিন কার্ড পাওয়ার অপেক্ষা তালিকায় প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি ভারতীয়ের নাম রয়েছে। যার মধ্যে গ্রিন কার্ড পাওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে চার লক্ষেরও বেশি মানুষ অপেক্ষা করতেই মারা যেতে পারেন। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, আমেরিকার গ্রিন কার্ড পাওয়ার যে অপেক্ষা তালিকা, তা দিনে দিনে দীর্ঘ হয়ে চলেছে। মাত্রা ছাড়িয়েছে তালিকায় থাকা বিভিন্ন দেশের অপেক্ষমান নাগরিকদের সংখ্যা।

ক্যাটো ইনস্টিটিউটের ডেভিড জে বিয়ারের ওই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রিন কার্ডের অপেক্ষা তালিকায় নাম থাকা প্রায় চার লাখ ২৪ হাজার মানুষ অনুমতিপত্র হাতে পাওয়ার আগেই মারা যাবেন।

বয়সের কারণেই স্বাভাবিক মৃত্যুর কথাই এখানে ধরা হয়েছে। এই চার লাখ ২৪ হাজার মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি ভারতীয়। সংখ্যায় যা প্রায় চার লাখের কাছাকাছি।

ওই সমীক্ষা বলছে, ‘‘নতুন করে আবেদন করা ভারতীয়দের গ্রিন কার্ড পাওয়ার জন্য আজীবন অপেক্ষা করতে হতে পারে। গ্রিন কার্ড পাওয়ার আগেই মারা যেতে পারেন প্রায় চার লক্ষ ভারতীয়।’’

আমেরিকার অভিবাসন আইন অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রতিটি দেশের জন্য মাত্র সাত শতাংশ গ্রিন কার্ড বরাদ্দ থাকে।

গ্রিন কার্ডের লাগামছাড়া চাহিদা এবং সীমিত বরাদ্দ সংখ্যার কারণেই অপেক্ষা তালিকায় নামের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সমীক্ষায় বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে, আমেরিকায় থাকা বহু ভারতীয় সন্তান শীঘ্রই তাঁদের বাবা-মায়ের থেকে আলাদা হতে পারেন বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বাবা-মা আমেরিকায় থেকে গেলেও আমেরিকা ছাড়তে হতে পারে সন্তানদের। সেই সংখ্যা এক লক্ষেরও বেশি।

সমীক্ষা অনুযায়ী, ১.৩৪ লক্ষ এমন ভারতীয় আমেরিকায় রয়েছেন, যাদের বয়স ২১ পেরোলেই তাঁদের এইচ-৪ ভিসা শেষ হয়ে যাবে। নতুন করে আবেদন করতে হতে হবে তাঁদের।

কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষা তালিকার কারণে তাঁরা তা না-ও পেতে পারেন। হয় তাঁদের পড়ুয়া ভিসা নিয়ে সে দেশে থাকতে হবে, নয়তো আমেরিকা ছাড়তে হবে।

প্রসঙ্গত, গ্রিন কার্ড অনাবাসীদের ভোটাধিকার না দিলেও আমেরিকায় স্থায়ী ভাবে থাকার অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয়। প্রতি বছর গ্রিন কার্ডের অনুমোদন চেয়ে তাই বহু আবেদন জমা পড়ে আমেরিকার প্রশাসনের কাছে।

বছরে এক লক্ষ আবেদনে ছাড়পত্রও দেয় প্রশাসন। কিন্তু আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় থমকে যায় সেই প্রক্রিয়া। গ্রিন কার্ডের লক্ষ লক্ষ আবেদন ছাড়পত্র না পেয়ে জমতে থাকে।

ক্ষমতায় আসার পরই আমেরিকার অভিবাসন আইনে আমূল সংস্কার করতে উদ্যোগী হন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্পের কুখ্যাত ‘জিরো টলারেন্স নীতি’, যার জেরে বহু শরণার্থী তাদের পরিবারকে হারিয়েছেন, তা-ও বাতিল করে নতুন করে তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন বাইডেন। তবে সেই নীতি নিয়ে সম্পূর্ণ জটিলতা এখনও কাটেনি।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.