ঠাণ্ডা পানির ক্ষতিকারক দিক

এই গরমের সময় রোদ তাপ থেকে একটু সস্তি পেতে আমরা সচরাচর ঠাণ্ডা পানি খেয়ে থাকি। বাইরে থেকে এসেই আমরা ফ্রিজের পানি খেয়ে থাকি। অনেকের পছন্দ অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি যার কারণে প্রতিনিয়ত ঠাণ্ডা পানি খেয়ে থাকে। অল্প ঠাণ্ডা খেলে কোন সমস্যা না হলেও অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সাধারণ পানি স্বাভাবিক অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদানে পূর্ণ থাকে; যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে এসব খনিজ উপাদানের কার্যকারিতা কমে যায়। তখন শরীরের জন্য এরা আর কোনো কাজ করতে পারে না। ফলে পানি থেকে শরীরের যে খনিজের চাহিদা পূরণ হয়, সেটা অপূর্ণই থেকে যায়।

অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি খেলে যে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়ঃ-

১. জ্বর হতে পারে: আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কিন্তু ঠান্ডা পানি পান করলে আমাদের রক্ত হঠাৎ করেই শীতল হয়ে যায়। ফলে শরীরে ভেতরের অংশে হঠাৎ করেই অস্বস্তি দেখা দেয়। গলা সংকুচিত হয়ে শরীরে তাপ বৃদ্ধি করে। ফলে জ্বর এসে যায়।

২. হার্টের সমস্যা: ঠান্ডা পানি পানের কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় হার্টের। গরম থেকে এসেই ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরের শিরা–উপশিরা সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয়ে হার্টের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে; যা দীর্ঘ মেয়াদে জটিল হৃদ্‌রোগ দেখা দিতে পারে।

৩. মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ে: মাইগ্রেন জাগিয়ে তোলার জন্য ঠান্ডা পানি পান করা একটি বড় অনুঘটক। যাঁদের মাইগ্রেনের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁরা ভালো করে জানেন তাঁদের অ্যাকালাসিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যথা বেড়ে যায়।

৪. পানির চাহিদা পূরণ হয় না: ঠান্ডা পানিতে তৃষ্ণা মেটে খুব দ্রুত; ফলে শরীর শীতলতার কারণে পানির চাহিদা কম অনুভূত হলে মনে হতে পারে পানি পানের আর প্রয়োজন নেই। অথচ শরীরের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটে না। পানির এই ঘাটতি থেকে পানিশূন্যতা তৈরি হয়, যা শরীরের অন্যান্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৫. খাদ্যনালি সংকুচিত করে: ঠান্ডা পানি পানের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যনালির ওপর শীতল প্রভাব পড়ে; যার কারণে দেহের খাদ্য সরবরাহকে সীমাবদ্ধ ও সংকুচিত করে এতে হজমের বিপত্তি ছাড়াও গলায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে; গলায় ক্ষতেরও সৃষ্টি করতে পারে।

৬. টনসিল ফুলে যাওয়া: এতে সহজে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। ফলে টনসিল ফুলে গিয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে।

৭. হজমের সমস্যা হয়: ঠান্ডা পানি পান করায় পাকস্থলী খাবার হজমের চাইতে ঠান্ডা পানিকে শরীরের তাপমাত্রায় নিয়ে আসতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে পাকস্থলীর যে মূল দায়িত্ব, সেই খাবার হজমের প্রক্রিয়ায় ঠিকমতো করতে পারে না। যার দরুণ হজমে সমস্যা দেখা দেয়। এতে শরীরের অহেতুক শক্তি খরচ হয়।

৮. দাঁতের ক্ষতি হয়: ঠান্ডা পানি দাঁতের অ্যানামেলের মারাত্মক ক্ষতি করে। গরম থেকে ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসামাত্রই দাঁতের বহিরাবরণ সংকুচিত হয়। ফলে অ্যানামেলে ফাটল ধরে। এ ছাড়া মাড়িক্ষয়ের অন্যতম একটি কারণও ঠান্ডা পানি।

৯. ব্যায়ামের পরে ঠান্ডা পানি ক্ষতিকর: ব্যায়ামের পরে তাপমাত্রা বেশি থাকে, তখন শরীরে উচ্চতাপমাত্রায় ঠান্ডা পানি খেলে তা শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। ফলে শরীরে পানির চাহিদা পূরণ হয় না। শরীর ডি–হাইড্রেট হয়ে যায়, যার দরুণ পেশিটানের সমস্যা তৈরি হয়।

১০. গর্ভপাতের সম্ভাবনা: গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঠান্ডা পানি পান করার ফলে জরায়ুর সংকোচন হয়। গর্ভাবস্থায় এ ধরনের সংকোচন গর্ভপাতের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

তাই এই গরমে ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা পানি পান না করে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করা উত্তম। শরীরে শীতলতার জন্য ঠান্ডা পানি নয়, স্বাভাবিক পানি পান করে হজমে সহায়তা, রক্তসঞ্চালনে সামগ্রিকভাবে আপনার শরীরকে বিষক্রিয়া থেকে দ্রুত মুক্তি দিতে পারে।

 

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.