রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই কমছে দেশের রিজার্ভ। ডলারের প্রবাহ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতির মধ্যে নারী শ্রমিক রপ্তানিও কমেছে। এসবের প্রভাবে রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ আরও কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) প্রবাসীরা ৫৫৭ কোটি ৫৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। এর আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে যার পরিমাণ মাত্র দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।
অথচ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী গেছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ রয়েছেন নারী শ্রমিক। এর আগের তিন মাসে বিদেশে কর্মী গিয়েছিলো ৩ লাখ ২৩ হাজার ১০ জন। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্বে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কর্মীর পরিমাণ কমেছে ৭ হাজার ৭৪৪ জন। আর ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রবাসে কর্মী গেছেন মোট ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন। কিন্তু সেই অনুপাতে দেশের প্রবাসী আয় বাড়েনি।
এবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শ্রমিকদের মধ্যে একটি বড় অংশ সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন। বিদেশে পাড়ি জমানো মোট শ্রমিকদের মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৭৮ জন বা ৩৫ দশমিক ১৬ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে গেছেন। এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়া। এই দেশটিতে পাড়ি জমান ৩২ দশমিক ৩২ শতাংশ, ওমানে ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, কুয়েতে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, কাতারে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশে গিয়েছেন ৫ দশমিক ১১ শতাংশ।
ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম কম থাকায় প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়িয়েছেন। এতে দিন দিন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ২৫ দিনে ১৩২ কোটি ৩০ লাখ ৭০ হাজার ডলার প্রবাসী আয় এসেছে দেশে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এক ডলার ১০৯ টাকা ধরে যার পরিমাণ ১৪ হাজার ৪২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গত জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার (২.১৯ বিলিয়ন ডলার) প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছিল। একক মাস হিসেবে যেটি ছিল প্রায় তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসা প্রবাসী আয়। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছিল। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২০ সালে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ সংখ্যক রেমিট্যান্স এসেছিল।
বিদায়ী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এটি এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।
বাংলাদেশে থেকে যেসব শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছেন, তার অর্ধেকেরও বেশি অদক্ষ। প্রশিক্ষণের আধুনিক সুবিধা ও পর্যাপ্ত ট্রেনিং সেন্টার না থাকার কারণেই বিদেশে পাঠানোর মতো দক্ষ শ্রমিক বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন।
অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.