পুঁজিবাজার ধীরে ধীরে গতিশীল হবেঃ ছায়েদুর রহমান

সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রবর্তিত স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী অ্যাওয়ার্ড ২০২২ এ সেরা ব্রোকারহাউজের পুরস্কার পেয়েছে ইবিএল সিকিউরিটিজ। দেশের পুঁজিবাজারে প্রথমে কোভিডের থাবা। তারপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কা। সামনে আবার জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত চাপ। এমন অবস্থায় পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি যেমন যেতে পারে তা নিয়ে অর্থসূচককে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে আলোচনা করেছেন ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) মোঃ ছায়েদুর রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অর্থসূচকের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. সুলাইমান মাসুম রহমান

অর্থসূচক: সম্প্রতি ইবিএল সিকিউরিটিজ বিএসইসি প্রবর্তিত স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী অ্যাওয়ার্ড ২০২২ এর সেরা ব্রোকারহাউজের পুরস্কার পেয়েছে। এ পুরস্কার প্রাপ্তিতে আপনার অনুভূতি কী? 

ছায়েদুর রহমান: পুরস্কার প্রত্যেককে আনন্দিত করে। আমার প্রতিষ্ঠান, আমি এবং শুভাকাঙ্খী সবাই মিলেই আনন্দিত। এই পুরস্কার আমাদের দায়িত্বশীলতার জায়গা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সবসময় আমরা চেষ্টা করি পুঁজিবাজারের গতিশীলতার জন্য এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করতে। এই পুরস্কার আগামী দিনে আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকায় কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে।

অর্থসূচক: পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

ছায়েদুর রহমান: পুঁজিবাজার সারাবিশ্বেই একটি চলমান প্রক্রিয়া। পুঁজিবাজার কখনো থেমে থাকে না। হয়তো কখনো উর্ধ্বমূখী ও কখনো নিম্নমূখী। তবে আমাদের পুঁজিবাজারে লম্বা একটা সময় ধরে অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর পেছেনে কাজ করছে ফ্লোরপ্রাইস পদ্ধতি। বিশ্বের কোথাও এই পদ্ধতি প্রচলিত না। ২০২২ সালের ২৮ জুলাইয়ে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলো। আমরা মনে করেছিলাম ফ্লোরপ্রাইস সাময়িক সময়ের জন্য থাকবে। তবে গত এক বছর ধরে এটি চলমান রয়েছে। কমিশন খুব দ্রুত এবিষয় বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করছি। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের যেন কোন ক্ষতি না হয়, আমরা সেটাও চাই। সাধারণ বিনিয়োগকারী অর্থাৎ যাদেরকে কেন্দ্র করে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো তাদের স্বার্থ রক্ষা হোক সেটাও আমরা চাই। আমরা চাচ্ছি না কালকেই এটাকে উঠিয়ে নেওয়া হোক। বাজার যদি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় যে এখন ফ্লোরপ্রাইস উঠে যাবে, তখনই কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমি মনে করি, ফ্লোরপ্রাইস যখন উঠে যাবে তখন বাজারে নতুনভাবে একটি ইতিবাচক ধারা তৈরি হবে।

অর্থসূচক: প্রথমে কোভিডের থাবা। তারপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কা। সামনে আবার জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত চাপ। এমন অবস্থায় আগামী ৬ মাস পুঁজিবাজার কেমন যেতে পারে বলে মনে করেন?

ছায়েদুর রহমান: সারা পৃথিবীতে পুঁজিবাজার স্পর্শকাতর একটি জায়গা। আমাদের বাজারে এই স্পর্শকাতরতা আরও বেশি। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব সারা পৃথিবীতে সমানভাবে পড়েছে। আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতে করোনা পরবর্তী ২৫ হাজার ইনডেক্স ছিলো, সেটা এখন প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি। শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলো। সেই দেউলিয়া হওয়া দেশের পুঁজিবাজারও এখন ইতিবাচক ধারায়। পাকিস্তানের বাজারও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। শুধু আমরা একটি জায়গায় স্থিতীশিল অবস্থায় রয়েছি। কারণ আমাদের এখানে পুঁজিবাজার নিয়ে ইতিবাচক আলোচনার চেয়ে নেতিবাচক আলোচনা বেশি হয়। আমরা যে যেই অবস্থানে আছি আলোচনার ক্ষেত্রে আমাদের একটি দায়িত্ব আছে , কোন আলোচনাটা পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে আর কোন আলোচনাটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা চিন্তা করা উচিত। আমরা যদি সার্বক্ষনিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রেগুলেটর সহ অনেককে নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়।

তবে তথ্য সঠিক বা মিথ্যা কিনা সেটা কিন্ত মানুষ যাচাই করে না। এই নেতিবাচক পর্যালোচনা আমাদের পুঁজিবাজারকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।

শ্রীলঙ্কায় যখন অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয় তখন হঠাৎ একদিন আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে ২০০ পয়েন্ট পতন হয়েছিলো। অথচ সেইদিন ভারতের বাজারে ১ হাজার ৪৮৭ পয়েন্ট বাড়ে এবং শ্রীলঙ্কাতে ২০০ পয়েন্টের বেশি বাড়ে। অনেকক্ষেত্রে আমরা অপ্রয়োজনীয় আলোচনা করি, এরফলে আমাদের অগ্রযাত্রায় অনেকক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। তাই আমাদের সকল অংশীদারকে একটু দায়িত্বশীল ভূমিকায় আসা উচিত এবং ইতিবাচক আচরণ করা দরকার। এখানে প্রতিদিন ট্রেড করা কথা যদি সবাই চিন্তা করি, প্রতিদিন এখান থেকে মুনাফার কথা চিন্তা করি তখন আমাদের ঝুঁকিটা বেড়ে যায়। পাশাপাশি এসব কারণে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা বেড়ে যায়। সেই যায়গায় আমরা যদি সচেতনভাবে ইতিবাচক চিন্তা করে বিনিয়োগ করি তাহলে কিন্ত আমরা বাজারের এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো।

সামনের নির্বাচনসহ সার্বিক অবস্থায় আগামী ৬ মাস পুঁজিবাজার কেমন যাবে এটা সুষ্পষ্টভাবে বলা মুশকিল। এগুলো অনেককিছুর উপর নির্ভরশীল। আমরা আশাবাদী এখান থেকে বাজার সামনের দিকে যাবে। বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার মতো আপতত কোনো কারণ দেখছি না। যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও আমরা বিশ্বের অন্যদের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছি। আমাদের দেশে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা বাড়লেও খাদ্যে মন্দা পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। আমাদের এখানে প্রচুর খাদ্য আছে এবং মানি মার্কেটে যে ইনফ্লেশন ছিলো তা ধীরে ধীরে কমে আসছে। ডলারের দাম একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে চলে আসছে। এখন প্রবাসী আয়ের পরিমাণও বাড়ছে। আমি মনে করছি আগামী ছয় মাসে পুঁজিবাজার ইতিবাচক ধারায় থাকবে।

অর্থসূচক: পুঁজিবাজারের গতিশীলতা বাড়াতে বিশেষ কিছু করণীয় আছে কী?

 ছায়েদুর রহমান: পুঁজিবাজার যে কোন দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অর্থনীতির পলিসি পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করে। ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয়ভাবেই প্রভাবিত করে, নির্ভর করে পলিসির উপর। আমাদের অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক পলিসি হয়েছে। আমরা আরও কিছু ইতিবাচক পলিসি প্রত্যাশা করছি। কিছুদিন ধরে আমরা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে যাচ্ছি, এবিষয়গুলো যদি বিবেচনায় নেওয়া হয় তাহলে আগামী দিনে পুঁজিবাজার একটি নতুন উদ্যম পেতে পারে। একটি প্রতিষ্ঠান কর্পোরেট ট্যাক্স কাটার পরে লভ্যাংশ দেয়। সেই লাভের উপর আমাদের সর্বোচ্চ হারে কর দিতে হয়। আমরা বার বার দাবি করে আসছি এই লভ্যাংশের উপর যে ট্যাক্স তা প্রত্যাহার করতে হবে। এরফলে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এখন আমাদের বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আগ্রহী হয় না। তার স্বল্পমেয়াদে অল্প লাভ হলেও ট্রেড করে বের হয়ে যেতে চায়। আর লভ্যাংশের উপর এই ট্যাক্স যদি প্রত্যাহার করা হয় তখন তারা দীর্ঘমেয়দি বিনিয়ো্গে আগ্রহী হবে। আমরা মনে করি, অন্ততপক্ষে তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশের উপর এই ট্যাক্স প্রত্যাহার করা উচিত। এরপরে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির ট্যাক্সের ব্যবধান আরও বাড়ানো উচিত। তাহলে ভালো ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে তালিকাভু্ক্ত হতে আগ্রহী হবে। এসব প্রতিষ্ঠান যখন বাজারে তালিকাভুক্ত হবে তখন ছোট পঁচা শেয়ারগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে।

ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোকে যতক্ষন পর্যন্ত বাজারে না আনা যাবে ততদিন এসব পঁচা ও বন্ধ কোম্পানির শেয়ারে গুজবের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে ফেলবে। নিরাপদ বিনিয়োগের চিন্তা করলে এসব বড় বড় কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। একজন স্পন্সর দীর্ঘদিন কষ্ট করে ব্যবসাকে একটি যায়গায় নিয়ে আসে। এখন এসব প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্তি হতে বললে তারা নিজেদের লাভের পরিমাণ খোঁজে। তাই উদ্যোক্তারা যাতে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হন সেই লক্ষ্যে কাজ করা উচিত। অন্যদিকে আমাদের ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদে ঋণ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করছে। এরফলে অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলপি হয়ে যাচ্ছে। যদি পুঁজিবাজারের মাধ্যমে এটি সরবরাহ নিশ্চিত করা যেতে তাহলে অনেক প্রতিষ্ঠানই এই ব্যাড লোন থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ পেত। ভালো ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে যত সহজে অর্থ পাচ্ছে, পুঁজিবাজারে আসলে তত সহজে অর্থ পাবেন না। তাই পলিসি ও প্রণোদনার মাধ্যমে আমাদের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা দরকার। উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে না পারলে পুঁজিবাজারের গভীরতা ও গতিশীলতা বাড়বে না। এরফলে নতুন বিনিয়োগকারীদেরও আনতে পারবো না। আমাদের যেসব নতুন প্রজন্ম লেখাপড়া করছে এবং যারা শেষ করেছে তাদের কর্মসংস্থান তৈরি করা বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মসংস্থার তৈরি করতেই বেসরকারি খাতকে প্রসারিত করতে হবে। বেসরকারি খাতের প্রসার ঘটাতে যে ধরনের পলিসি দরকার সেটা নিয়ে কাজ করা দরকার।

অর্থসূচক: পুঁজিবাজারে আইপিওর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। সম্ভবত সেকেন্ডারি মার্কেটের তারল্য সংকটের কথা বিবেচনা করে আইপিও অনুমোদনে ধীর চলো নীতি নেওয়া হয়েছে। বাস্তবেই কী নতুন আইপিও সেকেন্ডারি মার্কেটের গতিশীলতাকে ব্যাহত করে।

ছায়েদুর রহমান : আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি না যে আইপিও সেকেন্ডারি মার্কেটের গতিশীলতাকে ব্যাহত করে। আইপিওর মাধ্যমে যদি ভালো কোম্পানির শেয়ার আসে তাতে বাজারের গভীরতা বাড়ে। ভালো কোম্পানির সাথে নতুন বিনিয়োগকারী ও নতুন ফান্ডও আসে। আমরা রবির আইপিওর সময়ে দেখেছি প্রচুর নতুন বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারীরা এসেছে। এতে পুঁজিবাজারের গতিশীলতা বাড়ে। তাই আমি মনে করি না যে, আইপিও মাধ্যমে আসা প্রতিষ্ঠান বাজারের গতিশীলতা নষ্ট করে।

অর্থসূচক: বিএসইসির বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করা, এটিবি চালু, দূর্বল কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। যার অনেকগুলো ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। এই বাজারের উন্নয়ন ও বিকাশে আর কী কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?

ছায়েদুর রহমান: এই কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তারা নিরলশভাবে চেষ্টা করছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নতুন গতি তৈরি করতে। দীর্ঘদিন বাজার শুধু ইক্যুইটি মার্কেটে ছিলো। তারা এসে প্রথম বন্ড মার্কেট নিয়ে জোরালোভাবে কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বন্ড অনুমোদন দিয়েছে। কিছু তালিকাভুক্ত হয়েছে কিছু হয়নি। তবে আমাদের দেশে বন্ড মার্কেট যে হঠাত করেই তৈরি হয়ে যাবে সেরকমটা না। আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা সাধারণত ক্যাপিটাল গেইনে অভ্যস্ত সুতরাং বন্ড মার্কেটে ক্যাপিটাল গেইনের সুযোগ খুবই ক্ষীণ। যার কারণে আমাদের বিনিয়োগকারীরা বন্ড মার্কেটের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে নাই। আমি মনে করি আগামী দিনে তাদের মধ্যে সেই সচেতনতা আসবে। আমরা সবসময় বলি একটা ব্যালেন্স পোর্টফোলিও মেইনটেন করা উচিত। অনেকের কাছে ১০০ টাকা থাকলে আরও ১০০ টাকা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে। আর আমরা সবসময় বলি কারো কাছে ১০০ টাকা থেকে ৫০ টাকা বিনিয়োগ করতে। আর বাকি ৫০ টাকা সেইভ থাকা উচিত। বিনিয়োগ থাকা ৫০ টাকার মধ্যে কিছু পরিমাণ ইক্যুইটি মার্কেটের আর বাকিটা বন্ডে বিনিয়োগ করা উচিত। বন্ডে বিনিয়োগ করলে ক্যাপিটাল লস হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এছাড়াও কমোডিটি মার্কেট নিয়ে কাজ হচ্ছে। এটি চালু হলে নতুন একটি ধারা আমাদের জন্য তৈরি হবে।

অর্থসূচক: সংকটকালীন মুহূর্তে অন্যান্য দেশ এগিয়ে গেলেও আমরা পিছিয়ে পড়ছি কেন? এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার দরকার আছে কিনা?

ছায়েদুর রহমান: কমিশনের পক্ষ থেকে যথার্থ চেষ্টা করেছে। আসলে পুঁজিবাজার হলো বিনিয়োগকারীদের আচরনের বহি:প্রকাশ। তারা যখন ইতিবাচকভাবে বিনিয়োগ করার জন্য এগিয়ে আসে তখন পুঁজিবাজারের গতিশীলতা বাড়ে। একইসঙ্গে বাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে যখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা আসে তখন বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাজারের নেতিবাচক বা ইতিবাচক প্রভাবগুলো বিনিয়োগকারীদের আচরনেরই বহি:প্রকাশ। এক্সচেঞ্জ কমিশন প্লাটফর্ম মনিটর করে। তারা বিনিয়োগও করেন না এবং কাউকে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিতও করেনা না। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ কোনভাবে নষ্ট হচ্ছে কিনা সেবিষয়ে তারা তদারকি করে।

অর্থসূচক: আমরা একটা বিশেষ সময় পার করছি। এসময় সাধারন বিনিয়োগকারীদের করনীয় কী? আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের জন্য আপনার পরামর্শগুলো যদি শেয়ার করতেন।

ছায়েদুর রহমান: আমরা সবসময় প্রত্যাশা করি বিনিয়োগকারীরা ভালো থাকুক। তারা কম ঝুঁকি বা ঝুকিহীনভাবে বিনিয়োগ করুক সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি। সবসময় বিনিয়োগকারীদের বলি জেনে বুঝে বিনিয়োগ করুন। একইসঙ্গে লোভের যায়গাটা নিয়ন্ত্রণ করুন। বিনিয়োগকারীদের চিন্তা করা উচিত এই অর্থ ব্যাংকে রাখলে ৭ থেকে ৮ শতাংশ সুদ পাবো। তাহলে এমনভাবে আপনি এখানে বিনিয়োগ করেন যাতে ১০ বা ১২ শতাংশ লাভ পান। এভাবে চিন্তাভাবনা করে যদি আপনি বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনার ঝুকি কমে যাবে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের উচিত মার্জিন লোন পরিহার করা। কেউ বলতে পারবেন না যে বিনিয়োগ করার পরের দিন শেয়ারের দাম বাড়বে, সেটার দাম কমতেও পারে। শেয়ারের দাম বাড়ুক বা কমুক মার্জিন লোনের সুদ গুনতে হবে। তাই মার্জিন নিয়ে কখনো বিনিয়োগ করতে নেই। এটি হচ্ছে সাময়িক সেটেলমেন্টের জন্য।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.