নোবিপ্রবিতে শোকাবহ আগস্টের আলোচনা সভা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস-২০২৩ উপলক্ষে আজ বুধবার (২৩ আগস্ট) নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বিজ্ঞান অনুষদের আয়োজনে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ দিদার-উল-আলম।

সকাল ১১টায় নোবিপ্রবি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ ইদ্রিস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ আতিকুর রহমান ভূঞা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, আইআইটি পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম হোসেন, নোবিপ্রবি আইকিউএসি পরিচালক অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম। মুখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ এর গবেষক জনাব পবি দেবী থাপা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নোবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, ‘আগস্ট মাস আমাদের শোকের মাস এবং জাতীয় জীবনে বেদনার একটি মাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আমাদের আরও অনেক বেশি করে জানতে হবে। স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা চির স্মরণীয়। বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানের সকল বৈষম্যের বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতা উত্তর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি জায়গায় তিনি হাত দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কখনোই বিশ্বাস করতে পারেননি বাঙালিরা তাকে হত্যা করতে পারে, কারণ এদেশের মানুষকে তিনি তার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। সেই মহান নেতাকে হত্যা করে তারা জাতির পিতার আদর্শকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু ঘাতকরা সফল হয়নি। নতুন প্রজন্মকে বলবো তোমাদের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। তবেই দেশকে ভালোবাসা সম্ভব। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নোবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, ‘গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের সকল শহীদ সদস্যদের। ৭৫ পরবর্তী সময়ে সময়ে ব্যাপকভাবে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পেরেছে। ঘাতকরা সেদিন শুধু ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, গোটা পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল জাতির পিতাকে হত্যা করে এদেশে আবার পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করবে। তৎকালীন সরকারগুলো খুনিদের বিচার না করে বরং তাদের পুরস্কৃত করেছিল। এখনও সেই অপশক্তি সক্রিয়। এদের প্রতিহত করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সহযোগিতা করতে হবে। তবেই দেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা প্রতীয়মান হবে। জাতির পিতার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু গবেষক পপি দেবী থাপা ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ও আমাদের দায়’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘মৃত্যু তার কাছে নতুন কিছু ছিলনা। সারাজীবন যে বিশ্বাস এবং আদর্শকে ধারণ করে তিনি বেড়ে উঠেছেন, লড়াই সংগ্রাম করেছেন সেপথে মৃত্যু উঁকি দিয়েছে বহুবার। বঙ্গবন্ধু যে জাতিকে ভালোবেসেছিলেন এবং জাতি যে ভালোবাসা নিয়ে লড়াই সংগ্রামে তাঁর পাশে থেকেছে, সে আস্থায় সামান্য চিড় ধরুক এমন কিছু তিনি করতে পারেন না। কারণ তিনি জাতির পিতা, তিনি বঙ্গবন্ধু। নিজের সন্তানের প্রতি আস্থাহীনতা না দেখিয়ে তিনি মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন। ঘাতকেরা ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে কিন্তু পিতা আমাদের ওপর আস্থাহীনতা প্রদর্শন করে আমাদের কলঙ্কিত করেননি। এখানেই তার মহত্ব। নিরাপত্তার ঘোরটোপে থেকে রাজকর্ম পালন করা যায় কিন্তু বঙ্গবন্ধু হওয়া যায়না। তিনি আরও বলেন, এটি কেবল আর দশটা শরীরিক হত্যাকান্ডের মত ছিল না। একটি আদর্শকে হত্যা করা হয়েছিল। তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে তার আদর্শকে ধারণ ও বাস্তবায়ন করে। আর সে দায়িত্ব আমাদের প্রজন্মের। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ আতিকুর রহমান ভূঞা তার সমাপনী বক্তব্যে জাতির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, যে যার অবস্থান থেকে অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরুপে সম্পন্ন করতে হবে। তবেই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। পরে ‘বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা’ বিষয়ের ওপর রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন শিক্ষার্থী ফারহানা মনসুর প্রিয়া ও মো: মনসুর রহমান।

 

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.