মুরগির বাচ্চা আমদানি নিষিদ্ধ হলে জিম্মি হবে খামারিরা: বিপিএ

প্রান্তিক পোল্ট্রি শিল্প এখন হুমকির মুখে। মুরগির বাচ্চা আমদানি নিষিদ্ধ হলে খামারিরা কর্পোরেটরদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) নেতারা।

বুধবার (২৩ আগস্ট) প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিপিএর নেতা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার, সহ সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মেজবাউল হক, নোয়াখালী জেলার জাকির হোসেন, গাজীপুর জেলার অনিক সরকার, সাতক্ষীরা জেলার তসলিম আলম, কাপ্তান বাজার ডিম সমিতির সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম, তেজগাঁও ডিম সমিতির সভাপতি মোঃ আমান উল্লাহসহ সকল জেলা-উপজেলা থেকে আশা প্রান্তিক ডিলার খামারিগণ উপস্থিত ছিলেন ।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তারা বলেন, কর্পোরেট আদিপত্য বিস্তার পোলট্রি শিল্পকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য ছোট ছোট খামারিদের না রাখা। যা এসডিজি অর্জনে বড় বাধা।

এদিকে প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থে ২০১০ সালে মুরগির বাচ্চার দাম বেঁধে দেয় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সেই আদেশকে অমান্য করে কর্পোরেট গ্রুপগুলো হাইকোর্টে রিট করে তা বাতিল করে। তাই দেশে কখনো মুরগির বাচ্চার দাম ১০ টাকা আবার কখনো ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় চরম অস্তিরতা চলছে পোলট্রি শিল্পে। ঠিক সেই মুহূর্তে পোলট্রি নীতিমালা ২০০৮ সংশোধন করে কার স্বার্থে মুরগির বাচ্চা আমদানি নিষিদ্ধ ও চুক্তি ভিত্তিক খামারকে বৈধতা দিতে যাচ্ছেন। এ সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান সংগঠনটির নেতারা।

সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, কর্পোরেটদের কাছে পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়বে প্রান্তিক খামারি ও পোলট্রি শিল্প। মুরগির বাচ্চা ও ফিডের ব্যবসার লস করতে করতে অনেক হ্যাচারি ও ফিড মিল বন্ধ হয়ে গেছে, এটা ভুল তথ্য। আসলে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা টিকতে না পেরে ঝরে গেছে ছোট ছোট ফিড মিলগুলো। গুটিকয়েক কর্পোরেটদের আদিপত্য বিস্তার করে প্রান্তিক খামারিদের নীল চাষে বাদ্য করে ভোক্তাদের পকেট কেটে নিচ্ছে। যার প্রমাণ আগস্ট ২০২২ এবং মার্চ ও আগস্ট ২০২৩ বাজার সিন্ডিকেট।

কৃষি আইনে বলা আছে, প্রান্তিক চাষী উৎপাদক ৩০ শতাংশ লাভ করবে এর বিপরীতে কর্পোরেট মাঝে মাঝে ৬০ শতাংশ লাভ করে। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারিদের সব সময় ২০ শতাংশ লোকসান করে ডিম মুরগি বিক্রয় করতে হয়। ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬৭ টাকা, এক কেজি সোনালি মুরগির উৎপাদন খরচ ২৫৯ টাকা এবং ১টি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৭৯ পয়সা। গত চার মাস যাবত মুরগির কেজিতে লস গুণতে হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, আর ১ পিচ ডিমে ২ টাকা। খামারিদের অনেকেই মিথ্যা চেকের মামলা খেয়ে পথে পথে ঘুরছে। তাই পোল্ট্রি ব্যবসায় চেক জামানত রেখে ব্যবসা বন্ধ করতে হবে এবং এন আই একটের আইন সংশোধন করে সকল খামারি ও ডিলারকে কর্পোরেটদের মিথ্যা মামলার হাত থেকে মুক্ত করে উৎপাদনে ফেরাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যখন বাজারে সিন্ডিকেট হয় তখনই শুধু খামারিদের লাভ হয়। কর্পোরেটদের গ্রুপগুলো ঘোষণা দিলো ১৯৫ টাকায় মুরগি বিক্রয় করলেও তাদের লস হবে কিন্তু গত চারমাস যাবত ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় মুরগি বিক্রয় করতেছে এতে করে প্রান্তিক খামারি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে খামার বন্ধ করে দিচ্ছে। অন্য দিকে কর্পোরেট আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। তারা যখন এত লস করে তবে একেক জনের অনেকগুলো ফিড মিল হ্যাচারি হলো কি করে।

বিপিএ এর পক্ষ থেকে খামারিদের জন্য দিক নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, সকল প্রান্তিক খামারি সরকারি নিয়ম মেনে খামার করবেন। ক্রয় বিক্রয়ের পাকা রশিদ ব্যবহার করবেন। ডিম মুরগির উৎপাদন খরচ সমন্বয় করে যৌক্তিক মুনাফা যুক্ত করে আপনার পণ্যের আপনি নিজে মূল্য নির্ধারণ করে বিক্রয় করবেন। কোন প্রকার এসএমএস ও আড়তদারদের বেঁধে দেয়া দাম মানবেন না।

সরকারের উচিত খতিয়ে দেখে পোলট্রি ফিডের উৎপাদন খরচ বের করে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া। কারণ এরা খেয়াল খুশি মত ফিডের দাম বাড়িয়ে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার কারণে বাজারে ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে যাচ্ছে। বাজারে অভিযান না করে বড় বড় ফিড মিল ও হ্যাচারিতে অভিযান করে ফিডের দাম কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে বলেও জানান বিপিএ সভাপতি।

তেজগাঁও ডিম সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, সরকার ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বের করে ১২ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু সাপ্লাই চেইনে কে কত টাকা লাভ করবে তা পরিষ্কারভাবে বলা হয়নি। আমরা ডিমের দাম বাড়লেও যা লাভ করি কমলেও তাই লাভ করি। ডিমের বাজারে স্বস্তি আনতে বাজারে অভিযান না করে যারা ডিমের দাম নির্ধারণ করেন বড় বড় কর্পোরেট ফার্মে অভিযান চালান। তেজগাঁও, কাপ্তান বাজার, ডিম ব্যাবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে সকলকে বলছি তেজগাঁও ডিম সমিতি ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে না, খামারি যে দাম নির্ধারণ করেন আমরা সেই দামে ক্রয় করে বাজারজাত করে থাকি।

তিনি আরও বলেন, তেজগাঁও বাজারের নামে সারা দেশে মাসিক টাকা দিয়ে যারা এসএমএস সার্ভিস নিচ্ছেন তারা প্রতারিত হচ্ছেন। যারা এসএমএস করেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। খামারে যদি দাম বাড়ে তবে বাজারে দাম বাড়বে, খামারে যদি দাম কমে বাজারে দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক, এতে আমাদের কোন হাত নেই। বাজার বাজারের গতিতে চলে চাহিদার উপরে নির্ভর করে।

অর্থসূচক/এমএইচ/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.