চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংক ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। টাকার অংকে যার পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এই বিপুল অংকের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বুধবার (১৬ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত ব্যাংকার্স সভায় এ নির্দেশ দেন গভর্নর। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়াও সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের জানান, ওভার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে আসলেও এখনও আন্ডার ইনভয়েসিং হচ্ছে। সে বিষয়টা গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিরোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিপুল অংকের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ব্যাংক ঋণের একক সুদসীমা উঠিয়ে দিয়েছি এবং সেটা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে সব ব্যাংক। বৈশ্বিক সংকট এখনো বিদ্যমান থাকায় দেশের মূল্যস্ফীতিতে একটি চাপ রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট। সব মিলিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, যেসব ব্যাংক নির্ধারিত রেটের বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে তাদেরকে অবজারভেশনের মধ্যে রেখেছি। নিশ্চয় অপরাধিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন-অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে ব্যাংক খাত অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর। বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমে আসলেও ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টস ব্যালেন্স এখনো ঋণাত্মক। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটা কিভাবে কমিয়ে আনা যায় তার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি।

তারল্য সংকট নিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট রয়েছে। তবে সব ব্যাংক নয়, কয়েকটি ব্যাংকে এই সমস্যা। ব্যাংকগুলোকে সংকট নিরসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর। পাশাপাশি অতিরিক্ত দরে ডলার সংগ্রহ প্রতিরোধ, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ ভূমিকা এবং ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।
তিনি আরও বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট অনকেদিন নেগেটিভ ছিল না। খেলাপি ঋণও বড় চ্যালেঞ্জ। ২০-৩০ বছরের যে সমস্যা সেটা একদিনে কাটবে না। ধাপে ধাপে রেজ্যুলেশন নিতে হবে। ব্যাংকিং খাতের উপর মানুষের আস্থা বাড়াতে হবে। কারণ ক্যাশ সাপ্লাই ২ থেকে ৩ শতাংশ বেড়েছে । এটা ব্যাংক খাতে ফেরত আনতে হবে। গ্রাহকদের আস্থা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে। এছাড়া নিয়ম অনুয়ায়ী ঋণ পুন:তফসিল করা হয়। নিয়েমের বাইরে কোনো ব্যাংক করলে ৬ মাস পরে সেটা আবার খেলাপি হয়ে যায়।
এছাড়াও তিনি বলেন, লিক্যুউডিটিতে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। কয়েকটি ব্যাংকের কমে গেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন না যে গ্রাহকরা ঋণের আবেদন করে পাচ্ছে না। কারণ মানি সাপ্লাই কমে গেছে। অনেক ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারকে ঋণ দেয়াও কমানো হয়েছে। ফরেন এক্সচেঞ্জ রিপোর্ট অর্থাৎ লেনদেন রিপোর্টিং এ সব ব্যাংকের ফোকাস করা দরকার। কারণ তথ্যগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে সঠিকভাবে দেয়া হচ্ছে না। এখানে ভলো লোকবল, প্রশিক্ষক দরকার। প্রতিটি ব্যাংকের এ সাইটে একজন সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট থাকাও দরকার। পরিসংখ্যানগত রিপোর্ট ঠিকমতো না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.