নানা কারণে প্রায় গতিহীন দেশের পুঁজিবাজার। চলমে চরম তারল্য সঙ্কট। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের নাজুক অবস্থা, সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকি ইত্যাদি কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র উদ্বেগ। এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে নানামুখী গুজব। পুঁজিবাজারের বাতাস ক্রমেই ভারি হয়ে উঠছে নানামুখী গুজবে। তাতে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক। আর এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে ঘটছে বড় দর পতন।
বুধবার টানা ৩য় দিনের মত দরপতন হয়েছে বাজারে। এই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ কমে গেছে। দিনশেষে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১১২ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন। শুধু সূচক নয়, লেনদেনও কমছে বাজারে।
হঠাৎ বাজারের অবস্থা এতটা নাজুক হয়ে পড়ার পেছনে নানা গুজবের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। গত কয়েকদিন ধরেই দেশের কয়েকজন শীর্ষ ব্যবসায়ীর উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ অথবা সম্পদ জব্দের মতো গুজব ঘুরে বেড়াচ্ছে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে। এসব ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণাধীন একাধিক কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে। এছাড়া বড় কয়েকটি ব্যাংকের উপর আছে এদের একচ্ছত্র আধিপত্য। তাই তারা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়লে তাদের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো মুখ থুবড়ে পড়তে পারে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোও পড়তে পারে সঙ্কটে-এমন উদ্বেগ বিনিয়োগকারীদের।
এদিকে আজ বেলা ১২টার দিকে বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগের গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
আজকের বাজারে ভারতীয় হ্যাকার গ্রুপ কর্তৃক আইসিবিসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়া এবং তথ্য বেহাত হওয়ার খবরেরও নেতিবাচক প্রভাব ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে এসব গুজবের ন্যুনতম কোনো ভিত্তি নেই। নানা স্বার্থান্বেষী মহল তাদের নিজেদের হীন স্বার্থ হাসিল করার জন্য একের পর এক গুজব রটিয়ে চলেছে। বাজারে চলমান মন্দা ও নানা অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ হতাশ বলে সহজেই এসব গুজব বিশ্বাস করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে দর পতনের কিছু বাস্তব কারণ রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বিনিয়োগকারীদের অতি উদ্বেগের প্রভাব।
তারা মনে করেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জাতীয় নির্বাচনের আগে নানা অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ তৈরি হয়। পুঁজিবাজারের মতো সংবেদনশীল জায়গার তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা যে দুঃশ্চিন্তা করছেন, তারও প্রভাব আছে বাজারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্দেশনা অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা নতুন প্রতিবেদনে দেশের ব্যাংকিং খাতের যে নাজুক চিত্র উঠে এসেছে, সেটিও অস্বস্তি বাড়িয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
পাশাপাশি বাজারে চলছে তারল্য সংকট। ফ্লোরপ্রাইস ব্যবস্থা চালু করার পর থেকে বাজারে নতুন তহবিল আসা একেবারেই কমে গেছে। কারণ বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, এখানে বিনিয়োগ করা হলে সাময়িকভাবে তহবিল আটকে যেতে পারে। তাই তারা এ ঝুঁকি নিতে চান না। অন্যদিকে উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে এবং আগামী দিনে বাজারের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে এমন আশংকায় সুযোগ পেলে বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের অনেকে বাজার থেকে টাকা বের করে নিচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, গুজবে বিশ্বাস করে আতঙ্কিত হওয়াটা নিজের ও বাজারের জন্য ক্ষতিকর। অনেক ভাল শেয়ারের মূল্য এখন বিনিয়োগ অনুকূল অবস্থায় আছে। এসব শেয়ারে আপাতত মূলধনী মুনাফা না হলেও ভাল লভ্যাংশ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর একটু দীর্ঘ সময় বিনিয়োগ ধরে রাখতে পারলে মূলধনী মুনাফারও ভাল সুযোগ আসতে পারে। তবে অবশ্যই কোম্পানির মৌলভিত্তি দেখে বিনিয়োগ করতে হবে।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.