তদারকির অভাবে ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা: বিপিএ

সরকারি তদারকি না থাকায় পোল্ট্রি শিল্পে কর্পোরেটদের আধিপত্য বিস্তার করেছে। যার খেসারত দিচ্ছে জনগন। ন্যায্য মূল্য না পেয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ ছোট ছোট খামার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরবরাহ সংকট সৃষ্টি হওয়ার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এরফলে ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে জানায় খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ)।

বিপিএ জানায়, ছোট ছোট খামারি ও ডিলাররা পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটালেও আজ তারা অসহায়। প্রত্যাক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ৫০ লক্ষ প্রান্তিক উদ্যেক্তার অধকিাংশ খামারি জিম্বি হয়ে পড়েছেন কোম্পানির দাদন ব্যবসার কাছে। প্রান্তিক খামারিদের ডিম-মুরগি বাজারে আসলে দাম কমে যায়। এরফলে উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হয়। র্বতমানে প্রান্তিক র্পযায়ে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে ১১ টাকা র্পযন্ত। অপরদিকে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন খরচ ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা হলেও বাধ্য হয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রয় করতে হয়। বাজার কর্পোরেটদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা এস এম এস দিয়ে বাজার বাড়াতে চাইলে বাড়ে, আর কমাতে চাইলে কমে।

অন্যদিকে কর্পোরেট গ্রুপের মুরগি বাজারে আসলে দিগুণ লাভ হয়। কর্পোরেটদের একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকার কম, এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১৯ থেকে ১৩০ টাকা। প্রান্তিক ও কর্পোরেটদের উৎপাদন খরচই বলে দেয় বাজারের পরস্থিতি। সরকার চাইলে পোল্ট্রি ফিডের উৎপাদন খরচ যাচাই করে দাম কমানো সম্ভব। ২০২১ সালে ১ কেজি ভুট্টার দাম ২৮টাকা, ৫০কেজির এক বস্তা পোল্ট্রি ফিডের দাম ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা। এরপর ২০২২ সালের শুরুতে ভুট্টার দাম ছিল ২৮টাকা, ৫০কজির এক বস্তা ফিডের দাম ছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা। গত বছর উক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের দোহাই দিয়ে লাগামহীন ফিডের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভুট্টার দাম হয় ৪১টাকা কেজি। এছাড়া পোল্ট্রি ফিডের ৫০ কেজি বস্তার দাম ৩ হাজার ৭৪০ টাকায় পৌঁছায় বলেও জানায় সংগঠনটি।

তবে মার্চ মাস থেকে ভুট্টার দাম কমে দাঁড়ায় ২৪ থেকে ২৬ টাকায়। পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনে ৬০ শতাংশ ভুট্টা প্রয়জন হয়। সেই ভুট্টার দাম কমেছে কেজিতে ১৬ টাকা। অন্য উপাদান ৪০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড উৎপাদনের সকল পণ্যের দাম কমেছে। অপরদিকে পোল্ট্রি ফিডের দাম প্রতি কেজিতে ২৫ টাকা বাড়িয়ে কমানো হয়েছে ৩টাকা।

ফিড কোম্পানিগুলোর ফিড বাচ্চার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। ডিম ও মুরগির দাম কমিয়ে রাখতে ও খামারিদের উৎপাদিত পণ্যে যৌক্তিক মূল্য সংযোজন করতে হবে । অন্য দিকে প্রান্তিক খামারি কোম্পানিকে মুরগি দেয়ার শর্তে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে নামে চলে দাদন ব্যবসা। ৫০কেজির এক বস্তা ফিডের দাম ২ হাজার ৬০০ টাকা ধরে হিসাব করেও সব সময়রে জন্য একটি মুরগরি বাচ্চার দাম ৩৫টাকা ধরা হয়। কোম্পানির সাথে চুক্তিতে না গেলে ফিডের বস্তার দাম ৩ হাজার ৫৫০ টাকা ও বাচ্চার দাম ৪০ থেকে ৮০ টাকা দিয়েও অনেক সময় চুক্তির বাহিরে বাচ্চা বিক্রয় করেন না ।

একদিকে প্রান্তিক খামারি হারিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে কর্পোরেট গ্রুপগুলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। এই বৈষম্য দূর করে বাজারে প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ডিম মুরগি উৎপাদনে ৮০ শতাংশ শেয়ারের প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের সুরক্ষা দিতে হবে। এটি করা সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে আমিষের ঘাটতি দেখা দিবে। সিন্ডিকেটের বিরুধ্যে শাস্তির ব্যবস্থা না হলে ডিম মুরগি বেশি দামে কিনে খেতে হবে। জিম্বি হয়ে পড়বে ভোক্তা ও বাজার ব্যবস্থা। স্থিতিশীল বাজার রাখতে হলে কোম্পানিগুলোকে ১০০ শতাংশ ফিড ও বাচ্চা উৎপাদন করতে হবে। তাদের কন্ট্রাক ফার্মিং ও কোম্পানিদের ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।

প্রান্তিক খামারিরা ডিম মুরগি উৎপাদন করলে কখনো বাজার সিন্ডিকেট হবে না। খামারিদের সংগঠন বিপিএ র্দীঘদনি ধরে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেও বাণিজ্যমন্ত্রীর সচিবসহ প্রাণিসম্পদ এবং ভোক্তা অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তাদের অবহিত করে স্বারক লিপি প্রধান করে। পোল্ট্রি বোর্ডও মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার দাবির জানানোর পরিপেক্ষিতে খামারিদের উৎপাদিত ডিম মুরগি, পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ সমন্বয় করে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সকল স্টক হোল্ডারদের নিয়ে কমিটি করতে বলা হয় প্রাণিসম্পদকে। সেই কমিটিতে কর্পোরেট সিন্ডিকেটদের আধিপত্য বিস্তার করে। সেখানে খামারিদের সংগঠন বিপিএ’কে রাখা হয়নি কমিটিতে। রাখা হয়েছে ২০ শতাংশ উৎপাদন কারি কর্পোরেট গ্রুপের কয়েকটি এসোসিয়েশন ও এস এম এস দিয়ে যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তাদের নিয়ে কমিটি করা হয়।

সংগঠনটি আরও জানায়, ডিম ও মুরগির যোক্তিক মূল্য নির্ধারণ কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রান্তিক খামারিদের রক্ষায় প্রাণিসম্পদের ডিএলএস’কে দায়িত্ব দিলেও তাদের সাথে খামারিদের যোগাযোগ নেই। পোল্ট্রি খামারিদের রক্ষায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিএলএস-এর কর্মকর্তাদের কোনো ভূমিকা দেখছি না। তারা কর্পোরেটদের সহযোগিতা করে সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রানসিম্পদ অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় ৮০ শতাংশ ডিম ও মুরগি উৎপাদনকারি প্রান্তিক খামারিদের মিটিংয়ে ডাকা ও মতামত নেয়া হয় না। অর্থাৎ ২০ শতাংশ ডিম মুরগি উৎপাদনকারী কর্পোরেট গ্রুপদের নিয়ে মিটিং ও আলোচনা করে কখনই সুফল আসবেনা।

তাই পোল্ট্রী শিল্পের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে পোল্ট্রি শিল্পের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এছাড়া পোল্ট্রি শিল্প ও প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদনে ধরে রাখা ও ৫০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান রক্ষা করার দাবিও করেন তারা।

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.