মণিপুরে ভারতকে হত্যা করা হয়েছে: রাহুল

অনাস্থা বিতর্কে বলতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি আক্রমণ রাহুল গান্ধীর। তিনি বলেছেন, ‘আমি মণিপুর গেছিলাম। আজ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সেখানে যাননি। কারণ, ওর কাছে মণিপুর ভারত নয়। সত্যি কথা হলো, মণিপুর আর বেঁচে নেই। মণিপুর আপনারা দুইভাগে বিভক্ত করে দিয়েছেন।’

কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, ‘আমি ত্রাণশিবিরে গেছিলাম। নারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলেছি, একজন নারী বললেন, তার একটাই বাচ্চা ছিল। তার সামনে বাচ্চাকে গুলি করে মারা হয়। পুরো রাত ওর মৃতদেহ নিয়ে বসেছিলাম।’

বিজেপি সাংসদদের কয়েকজন বলে ওঠেন, মিথ্যা কথা। রাহুলের সঙ্গে সঙ্গে জবাব, ‘তোমরা মিথ্যা বল। আমি বলি না। ওই নারী আমায় বললেন, তারপর ভয় লাগলো। ঘর ছেড়ে, যা ছিল সব ছেড়ে দিয়ে এসেছি। একবস্ত্রে চলে এসেছি। একটা ফটো কেবল নিয়ে এসেছি।’

রাহুল জানান, ‘অন্য একটি শিবিরে এক নারী তার কথা বলতে শুরু করেই কাঁপতে থাকলেন। তার ভয়ঙ্কর ছবি মনে পড়ে গেল। তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন।’

এরপরই রাহুলের সরাসরি অভিযোগ, ‘বিজেপি ভারতকে হত্যা করেছে। এদের রাজনীতি শুধু মণিপুরকে মেরে দিয়েছে তাই নয়, ভারতকেও মণিপুরে হত্যা করেছে। ভারতমাতার হত্যা আপনারা মণিপুরে করেছেন। মণিপুরের মানুষকে মেরেছেন। আপনারা দেশদ্রোহী। এজন্য প্রধানমন্ত্রী মণিপুর যেতে চান না। আমার এক মা এখানে, অন্য মাকে মণিপুরে হত্যা করা হয়েছে।’

রাহুলের দাবি, ‘মণিপুরে সেনার প্রয়োগ করা হচ্ছে না। আপনারা সেনাকেও মারতে চান মণিপুরে। মোদীজি ভারতের হৃদয়ের আওয়াজ শোনেন না। কার আওয়াজ শোনেন? এরপর রাহুল নিজেই সেই প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘মোদী দুজনের আওয়াজ শোনেন। রাবণ যেমন দুই জনের কথা শুনত। মেঘনাদ ও কুম্ভকর্ণ। মোদীজি দুজনের কথা শোনেন। অমিত শাহ ও আদানি।’

রাহুলের অভিযোগ, ‘রাবণের অহঙ্কার লঙ্কা জ্বালিয়েছিল। বিজেপি এখন পুরো দেশে কেরসিন ফেলছে। হরিয়ানায় ফেলেছে। মণিপুরে ফেলেছে। তোমরা দেশকে জ্বালাতে চাইছ।’

রাহুল তার ভাষণ শুরু করেন ভারত জোড়ো যাত্রার অভিজ্ঞতা দিয়ে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত আমি গরিব-বড়লোক নির্বিশেষে সবার কথা শুনতাম। একজন কৃষক এলেন। হাতে তুলো নিয়ে। তিনি আমাকে তুলো দিয়ে বললেন, এটাই আমার ক্ষেতে বেঁচে আছে। প্রশ্ন করি, বিমার পয়সা পেয়েছেন। বলেন, পাননি। বড় শিল্পপতিরা ছিনিয়ে নিয়েছেন। যখন কৃষককে দেখলাম। ওর মনের ভয়, আমার মনে এল। ওর ক্ষুধা বুঝতে পেলাম। যাত্রা বদলে গেল। সাধারণ মানুষের দুঃখ, আঘাত আমার দুঃখ ও আঘাতে পরিণত হলো।’

রাহুল বলেছেন, ‘লোকে বলে, এই দেশ একটা আওয়াজ। এই দেশের মানুষের আওয়াজ। তাদের দুঃখ, কষ্টের আওয়াজ। আমাদের মনের অহঙ্কার দূর করতে হবে। নাহলে আপনি ভারতের আওয়াজ শুনতে পারবেন না। অহঙ্কার ও ঘৃণাকে আগে দূর করতে হবে। নাহলে মানুষের আওয়াজ শুনতে পারবেন না।’

রাহুলকে জবাব দিতে ওঠেন বিজেপি-র মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তিনি কাশ্মীরি পন্ডিতদের উপর হওয়া অত্যাচারের কথা তোলেন। কংগ্রেস আমলে হওয়া নারীদের উপর অত্যাচারের খতিয়ান দেন। তিনি দাবি করেন, কাশ্মীরি পন্ডিতদের উপর অত্যাচার বন্ধ হয়েছে সেখানে মোদী ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর থেকে।

স্মৃতির অভিযোগ, ‘লোকসভায় মণিপুর নিয়ে আলোচনা করতেই চায়নি কংগ্রেস। অমিত শাহ বা রাজনাথ সিং যখনই আলোচনার কথা বলেছেন, তখনই তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দাবি করে সেই আলোচনা থেকে সরে গেছে।’

স্মৃতি বলেন,’কংগ্রেস আগে দুর্নীতির ব্যাখ্যা দিক, অযোগ্যতার ব্যাখ্যা দিক। তোমরা তো ভারতের অংশ নও। কারণ, ভারত দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। ভারত পরিবারবাদী নয়। ব্রিটিশদের কংগ্রেস বলেছিল, ভারত ছাড়। পরিবারবাদীরা এখন ভারত ছাড়।’ সূত্র: ডিডাব্লিউ, লোকসভা টিভি

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.